রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাজস্থানের জয়পুর থেকে তৃণমূলের জাতীয় দলের মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই ঘটনা সবার আগে টুইট করেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের মাঝেই এই ঘটনা ঘটে। উক্ত টনায় বিজেপিকে কার্যত তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, সাকেত গোখেল মোরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার একটা খবর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন, আর সেটাকে সাইবার ক্রাইমের আওতায় এনে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে গুজরাত পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী এই পুরো ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং প্রতিহিংসার ছাপ দেখছেন, তা তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজস্থানে পৌঁছনোর আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র সাকেত গোখেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জয়পুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে গুজরাত পুলিশ। তা শুনে রাজস্থানের পুস্করে এই গ্রেফতারির প্রতিবাদে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, মিথ্যে অভিযোগে সাকেতকে ফাঁসানো হয়েছে। আর এ কাজ বিজেপিই একমাত্র করতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার দিল্লিতে দলের সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে থাকছেন অভিষেকও। সংসদে শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের ভূমিকা কী হবে তা ঠিক হতে চলেছে সেই বৈঠকে।
তবে অনেকেই মনে করেছিলেন, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক যখন ফের ঠিক হচ্ছে তখন হয়তো তৃণমূল এবারে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিজেপি তথা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সেভাবে সরব হবে না। কিন্তু সাকেতের গ্রেফতারের পর সেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে। পাশাপাশি সংসদে তৃণমূলের রণনীতিতেও বদল আনা হবে বলেও জোড়াফুল সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিন অর্থাৎ বুধবার থেকেই শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। অন্যদিকে দিল্লিতে দলের সাংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা। বৈঠকে হাজির থাকবেন দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সব সদস্যরাই। জানা গিয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান বঞ্চনা যে আসলে ‘অর্থনৈতিক অবরোধ’ করার কেন্দ্রীয় কৌশল, সেই বিষয়টি এদিনের বৈঠকে দলের সাংসদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন মমতা। পাশাপাশি ‘এজেন্সি-রাজ’ নিয়েও তিনি সরব হতে পারেন। পাশাপাশি মোদি সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্ত- জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি রোধে ব্যর্থতার মতো ইস্যুগুলিকে সামনে রাখবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। এমনকী কংগ্রেসের প্রতি দলের মনোভাব কী হবে, তাও ঠিক হবে এদিনের বৈঠকে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলনেত্রী বলেন, "সাকেত সমাজমাধ্যমে খুবই জনপ্রিয়। কোনও ভুল উনি করেননি। ওঁকে গ্রেফতার করেছে। খুব খারাপ খবর। ওঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। অনেক কষ্টে বেঁচেছে। রাত দু’টোয় গুজরাটের পুলিশ ওকে আহমেদাবাদে নিয়ে গিয়েছে। কেন, না উনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটা টুইট করেছিলেন।" পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, "আমার বিরুদ্ধেও তো কত টুইট হয়েছে। তবে এই বিষয়টি সাইবার অপরাধ হলে দেখা উচিত। ব্যক্তিগত আক্রমণ হয় এমন টুইট করা উচিত নয়। মোরবিতে সেতু ভেঙে পড়েছে। এটা একটা বড় কাণ্ড। এই নিয়েই উনি টুইট করেছিলেন। এই পদক্ষেপকে ধিক্কার জানাচ্ছি।" প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সামনে তৃণমূলের দুই কক্ষের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন স্পষ্ট জানান, "সাকেতকে গ্রেফতার করে বিজেপি এটা যেন বুঝে না নেয় যে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূল চুপ করে সব মেনে নেবে। সংসদে বিরোধীদের কথা সরকারকে শুনতেই হবে। অধিবেশনে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনাও করতে হবে।" সাকেত প্রসঙ্গে সুদীপবাবু রাজনাথের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’