বাড়ির কাজ ,পড়াশোনা ,অফিস , সংসার এর গণ্ডিতে হাঁফিয়ে উঠেছেন? আর কাজে মন বসছে না? মনে হচ্ছে একটু হাওয়া বদলের দরকার ?? খুব সামনেই আছে এমন জায়গার সন্ধান যেখানে গেলে আর ফিরে আসতে মন চাইবেনা।তো আর দেরি না করে শীতের আমেজ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ব্যাগ গুছিয়ে নিন আর বেরিয়ে পড়ুন সেই মনোরম ভ্রমণ কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে।
জায়গাটি কলকাতা থেকে মাত্র আড়াই তিন ঘন্টার রাস্তার দূরত্বে অবস্থিত।চারিদিকে পাহাড় ,হ্রদ , ড্যাম,ঝর্না,মন্দির ,নদী আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই জায়গা।জায়গা টির নাম ঘাটশিলা। তবে কলকাতার এত কাছে থাকলেও এটি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অংশ নয়।বরং ভিন রাজ্য ঝাড়খণ্ড এর পূর্ব সিংভূম জেলায় অবস্থিত এই ঘাটশিলা। হাওড়া রেল স্টেশন থেকে সকাল ৬.২০ তে চাপতে পারেন বার্বিল জনশতব্দি এক্সপ্রেস এ। যার সেকেন্ড ক্লাস এর ভাড়া মাত্র ১২৫ টাকা। চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই সকাল ৮.৫৬ নাগাদ পৌঁছে যাবেন ঘাটশিলা স্টেশন এ।এছাড়াও দিনের অন্যান্য সময় এ রয়েছে নানান লোকাল ট্রেন ও এক্সপ্রেস ট্রেন ও।ঘাটশিলা স্টেশন এ পৌঁছে টুকিটাকি ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়ুন অপরূপ সুন্দর জায়গাগুলি এক্সপ্লোর করতে।স্টেশন এর কাছ থেকে অটো ভাড়া করতে পারেন।এই অটো তেই আপনি সারাদিন ঘুরতে পারেন আর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।১২০০ থেকে ১৪০০ টাকার বিনিময়ে এই চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেন।
প্রতি অটো পিছু এই পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
ঘাটশিলা তে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।জেনে নিন সেগুলি কি কি।
° ধারাগীরি ওয়াটারফলস - পাহাড়ি রাস্তার মজা নিতে নিতে বেশ কিছুটা পথ অতিক্রম করে প্রথমেই পৌঁছে যেতে পারেন ধারাগিরি ওয়াটারফলস এর সামনে।চারিদিকে পাহাড় ,আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের সুন্দর সুন্দর মাটির তৈরি বাড়িঘর দেখতে দেখতে এগিয়ে যাবেন ধারাগীরী এর দিকে।পৌঁছে যাবেন এক অন্য জগতে।চারিদিকে বন জঙ্গল বড়ো বড়ো পাথরের চাই আর তার মাঝে রয়েছে এক ঝর্না।চারিদিকের শান্ত পরিবেশ,পাখির ডাক আর ঝর্নার অপরূপ সৌন্দর্য্য আপনাকে মোহিত করে তুলবে।
° বুরুডি লেক - এরপর ই আপনারা চলে আসতে পারেন বুরুডি লেকে।পাহাড়ের গা দিয়ে আসতে আসতে দেখবেন অপরূপ সুন্দর এই বুরুডি লেক,যা ঘাটশিলার অন্যতম মূল আকর্ষণ।চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড় আর তার মাঝে আগলে রেখেছে যেনো বুরুডি লেক কে।চাইলে লেক এ নামতেও পারেন।পাহাড় আর লেকের অসাধারণ ভিউ দেখতে দেখতে দুপুরের লাঞ্চ ও সেরে ফেলতে পারেন বুরুদি তে।
° চিত্রকুট পাহাড় - এরপর গাড়ি আপনাকে নিয়ে রওনা দেবে চিত্রকুট পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।পাহাড়ের গায়ে ধাপ কেটে সিড়ি তৈরি করা হয়েছে।যা দিয়ে আপনি উঠতে পারবেন একেবারে পাহাড়ের চূড়ায়।সেখানে রয়েছে শিব মন্দির।পাথরের গায়ে আঁকা রয়েছে শিব মূর্তি।পাহাড়ের ওপর থেকে ঘাটশীলার অপরূপ সৌন্দর্য্য চোখে পড়বে।
° রঙ্কিনি মন্দির - এখানের খুব ই জাগ্রত মন্দির রঙ্কিনী মন্দিরে প্রবেশ করে নিজেদের মনোকামনা ব্যক্ত করতে পারেন।
° রামকৃষ্ণ মঠ - যাওয়ার পথেই পড়বে রামকৃষ্ণ মঠ।সেখানকার নিরিবিলি নিশ্চুপ পরিবেশ আপনাকে মনের প্রশান্তি এনে দেবে।
কোনারক মন্দির - সুবর্ণরেখা নদীর তীরে পুরীর কনারক সূর্য মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে কণারক মন্দির।নদীর পাশে এই মন্দির টির ভিউ অসাধারণ।
° গৌরী কুঞ্জ - সাহিত্যপ্রেমী দের কাছে এ এক অন্যরকম ভালোবাসা।কারণ এই গৌরী কুঞ্জ হলো ' পথের পাঁচালী ' এর স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বসত বাড়ি।স্ত্রী এর নামানুসারে তিনি এই বাড়ির নাম রাখেন গৌরী কুঞ্জ।তিনি দীর্ঘদিন এই বাড়িতে ছিলেন।তাকে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন স্মারক রাখা আছে এই বাড়িতে।
° রাতমোহনা - পড়ন্ত বিকেলে পৌঁছে যেতে পারেন রাতমোহনায়।চারিদিকে জল এর তার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাথরের চাই।নদীর জলের কলকল শব্দ,জলে সূর্যের প্রতিচ্ছবি, ঝর্না আপনাকে এক অন্য সূর্যাস্তের অনুভূতি দেবে।ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা যায় এখানে।
এরপর আবার ফিরে আসবেন ঘাটশিলা স্টেশন এ।সেখান থেকে ফিরে আসবেন বাড়ি।একদিনের এই টুর আপনাকে একঘেয়েমি থেকে মুক্ত করবে।পাবেন কাজ করার নতুন উদ্যম।আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন তাড়াতাড়ি।।