#Pravati Sangbad Digital Desk:
কাশী সংগীত সমাজ তাঁর বাবাকে পণ্ডিত, সংগীত রত্ন সহ একাধিক উপাধিতে ভূষিত করেছিল। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। কৈশোর বয়স থেকেই দারুন গান গাইতেন তিনি। সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে তিনি মুগ্ধ করেছেন আপামর বাংলার সঙ্গীত প্রেমী মানুষ কে। নির্মলা মিশ্র পরাধীন ভারতে ১৯৩৮ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বাবার চাকরির সূত্রে পরিবারের সঙ্গে কলকাতার চেতলায় স্থানান্তরিত হন। শৈশবকাল থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়েছেন নির্মলা মিশ্র। তাঁর বাবা পণ্ডিত মোহিনী মোহন মিশ্র এবং দাদা মুরারিমোহন মিশ্র সুপরিচিত গায়ক ছিলেন। নির্মলা মিশ্রের ডাক নাম ছিল ঝামেলা। ছোটবেলায় নাড়া বেঁধেছিলেন বাবা পণ্ডিত মোহিনীমোহন মিশ্রের কাছে। তখন থেকেই জোরকদমে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। আচমকাই তাঁর টাইফয়েড হয়। সে সময় দুরারোগ্য ব্যধি। নির্মলা মিশ্রর চিকিৎসা করেছিলেন প্রথিতযশা চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়। ওঁর চিকিৎসায় সুস্থ হন নির্মলা। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অত ছোট বয়সেই হৃদরোগ দেখা দেয়। বিধান রায়ের কড়া নির্দেশ ছিল, আর গান শেখা চলবে না।সবাইকে লুকিয়ে আধুনিক গান শিখতে শুরু করেন। অনেক পরে তাঁর বাবা তাঁকে এই ধরনের গান শেখার অনুমতি দেন। এর পরেই একাধিক ব্যক্তিত্বের কাছে গান শেখেন। প্রথম রেকর্ড ১৯৫৭ সালে। ১৯৬০ সালে ‘শ্রী লোকনাথ’ ছবিতে গান গাওয়ার মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন নির্মলা। কেবল আধুনিক আর প্লে ব্যাক তো নয়। নজরুলগীতি, শ্যামা সংগীত, লোকগীতি, দেশাত্মবোধক সব ধরনের গানেই পারদর্শী ছিলেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে অন্যতম-এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না, আমি তো তোমার হাসি কান্নার চিরদিনের সাথী, এছাড়াও ও তোতা পাখিরে, এই বাংলার মাটিতে – প্রভৃতি গানও সকলের অতি পরিচিত। তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যাঁর কণ্ঠে এক সময় গোটা বাংলা মেতে উঠেছে, শেষ বয়সে তিনি কথাও বলতে পারতেন না। দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। লাল রং তাঁর ভীষণ প্রিয় ছিল। চশমার ফ্রেম থেকে নখ-পালিশ, সবেতেই থাকত লাল রঙের ছোঁয়া। বাংলা সঙ্গীত জগৎকে বছরের পর বছর ধরে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের গানে। এই গানগুলিতেই নির্মলা মিশ্র বেঁচে থাকবেন শ্রোতাদের মনে।
গত ছ’বছর ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন নির্মলা মিশ্র। অথচ তিনিই ২০০১ সালে দূরদর্শনের বিশেষ অনুষ্ঠানে জিভের তলায় দুটো সরবিট্রেটের বড়ি রেখে টানা গান গেয়েছিলেন। এর পরেই তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়। সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার। রাজ্য সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিয়েছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ডক্টরেট উপাধি। তাঁর সঙ্গে এই সম্মান পেয়েছিলেন অমল পালেকর, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ওড়িশা সরকার তাঁকে দিয়েছে গান-গান্ধর্বী পুরস্কার। কিন্তু এইসব কিছু ছেড়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ঘুমের দেশে।
গত ৩১ জুলাই ২০২২ নিজের চেতলার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জানা যাচ্ছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। নির্মলা মিশ্রের ব্যক্তিগত চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, এর আগেও একাধিক বার, তিন থেকে চার বছরে ১০ থেকে ১৫ বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নির্মলা মিশ্র। অন্তত তিনবার তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। হার্ট অ্যাট্যাকও হয়েছিল দু'বার।
আধুনিক, নজরুলগীতি, শ্যামাসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক, লোকগীতি ছাড়াও বহু ছায়াছবিতে তিনি গান গেয়েছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির উপদেষ্টা পরিষদ ও বাংলা সঙ্গীতমেলা কমিটির কার্যকরী সমিতির সদস্যা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে 'সঙ্গীতসম্মান' এবং ২০১৩ সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' ও 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মাননা প্রদান করে।
Journalist Name : Aparna Dutta