জিতলে বিধাননগরের মেয়র হবেন কে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কৃষ্ণা চক্রবর্তীর মুখোমুখি প্রভাতী সংবাদ

banner

#Bidhan Nagar Municipal Corporation:

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে চারটি পুরনিগমের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার। তারমধ্যে বিধাননগর পুরসভার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হলেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। পুনরায় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বেশ আপ্লুত দেখা গেল তাঁকে। তবে পরবর্তী বিধান নগর পুরসভার মেয়র পদ কে থাকছে? উঠছে নতুন প্রশ্ন। সব্যসাচী দত্তের মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেস আস্থা রেখেছিল কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ওপরে।
তিনি নিজে মেয়র হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই মুহূর্তে কাউন্সিলরদের এক বড় অংশ কৃষ্ণা চক্রবর্তী মেয়র পদে নিযুক্ত হওয়ার বিষয়কে সমর্থন করলে তাদের ইচ্ছে ষকে মান্যতা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বিধান নগর পুরনিগম ভোটের প্রার্থী হয়েছেন বিরোধীদল ফেরত সব্যসাচী দত্ত । যেহেতু তিনি পূর্বে বিধান নগর পুরসভার মেয়র ছিলেন তাই প্রশ্ন উঠেছে পরবর্তী মেয়র পদে আসীন হবেন কে? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেই আজ প্রভাতী সংবাদের মুখোমুখি বিধাননগর পৌরসভার সল্টলেক এলাকার ২৯নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণা চক্রবর্তী।

কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, ”বিধান নগর পুরসভার ৪১ টা ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজেদের মধ্যে কম্পিটিশনে কাজ করেছে। ফলে যারা যোগ্য, ভালো কাজ করেছে এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাঁদেরকে পুরভোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে আমাদের দল”। তিনি জানান, বিধান নগর পৌর কেন্দ্রের প্রত্যেকটি কাজ সুষ্ঠুভাবে করা হয়েছে। মানুষের প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই কাজ করে গিয়েছেন তাঁরা।

এছাড়াও বিধান নগর কেন্দ্রে জল জমার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে মানুষকে একটু সতর্ক হতে হবে। নিকাশি নালার প্লাস্টিক আটকে যাওয়ায় জল জমার মতন সমস্যাগুলি হয়েছিল। এতে পৌরসভার কাজের কোনো খামতি ছিলনা”। এই সমস্যা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর পর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নতুন বছরেই খালগুলি সংস্কার করা হবে এবং জল নিকাশি ব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বিধান নগর পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন তিনি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজন মতো কাজ করে গিয়েছেন বলে জানান। এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা, বর্জ্যব্যবস্থা ,পার্ক এবং অন্যান্য স্থানগুলির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। পরবর্তীকালে যদি তাঁর দায়িত্বে থাকে তবে আরও ভাল কিছু কাজ বিধান নগরবাসীকে তিনি দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, “দল যত বড়ো হয়, তত মানুষ যুক্ত হয়। অনেক মানুষেরই দাঁড়াতে ইচ্ছে করে। এটা তৃণমূল পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একটা কথা এরা কেউই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কিছু বোঝে না। পর্যালোচনা করেই প্রার্থী করা হয়েছে।“
পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন সব্যসাচী দলের সাথে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। এমনকি আজ দলের প্রতীক দিতে সব্যসাচীকে নিজের বাড়িতেও ডেকেছেন কৃষ্ণা। তবে, বিধাননগরের মেয়র কে হবে তা নিয়ে কলকাতা পুরভোটের মতোই জল্পনা জিইয়ে রেখেছে শাসক দল। যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের শেষ নেই। এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণার চাঁচাছোলা জবাব, “ওরা আগে মেয়র পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করুক না! নিজেদের নাম দিতে পারছে না। আমাদের দলের ক্ষেত্রে শীর্ষনেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।“

তিনি নিজের মুখে এও বললেন যে, "দল এখনও আমায় প্রার্থী করেনি। যদি আমায় প্রার্থী করে তা হলেও রোজ যেমন মানুষের কাছে যাই, মানুষের সমস্যা মেটাই তেমনি মানুষের পাশে থেকেই সমস্যা মেটাব। আর যদি দল প্রার্থী না করে তা হলে যাঁকে প্রার্থী করবে তাঁর হয়ে মানুষের কাছে পৌছাব।”
তিনি দাবি করেন, তৃণমূল কর্মীরা সবসময় তৃণমূলের জন্য রাস্তায় থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাঁরা। ‘স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সমস্যা মেটানোই আমাদের প্রধান কাজ’, বলেন প্রাক্তন মেয়র। পাশাপাশি তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “বিধাননগর কর্পোরেশনের বোর্ড মা মাটি মানুষের বোর্ড হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আশির্বাদে মানুষের বোর্ড হবে।”
ওমিক্রন নিয়ে সচেতনতার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “করোনার ভ্যাকসিন ছোট থেকে বয়স্ক সকল মানুষকেই দেওয়া হয়েছে, যারা বাকি আছেন তাদের আবার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়স্ক মানুষদের ভ্যাকসিনের দায়িত্ব নিয়ে আমরা তৃণমূল কর্মীরাই তাদের নিয়ে গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়ে দিচ্ছি। কারুর কোনো রকম কোনো সমস্যা থাকলে তার বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দিয়ে আসা হচ্ছে। সভা, মিছিল, জনসমাগম, যতটা পাচ্ছি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। মানুষকে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, দূরত্ব বিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কাদের এখনো অব্দি ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি আছে।”
নিজের রাজনৈতিক  জীবন যুদ্ধ  সম্পর্কে তিনি জানান, রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের অনুপ্রেরণা মেনেই কলেজের ছাত্র-জীবন থেকেই এই রাজনৈতিক জগতে তার আসা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে থেকে তার ছত্র ছায়ায় থেকেই মানুষের জন্য আজীবন কাজ করে যেতে চান বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান যে এই ওয়ার্ডের মানুষদের কোনো চাহিদা অপূর্ণ  রাখেন নি তিনি। যতটা পেরেছেন যেইটুকু পেরেছেন করেছেন। 
নির্বাচনে জেতার পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, “ আগে আমি যখন প্রথম এখানে জয়ী হয়ে এসেছিলাম দেখেছিলাম এই ওয়ার্ডে মানুষ একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার করছে, না ছিল ঠিক মতো খাওয়ার জল, আর না ছিল ব্যবহার করার মতো জল।সেটা দেখে আমি ভিশন ভাবে কষ্ট পেয়েছিলাম। জীবন বাঁচানোর জন্য জল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর সেই সময় মানুষজন জল পাচ্ছে না, হাহাকার করে বেড়াচ্ছে। আমি তখন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেই খবর জানাই এবং একটি জলাধার তৈরি করি,ববি দা (ফিরাদ হাকিম) তখন নগরুন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি সেই জলাধারের উদ্বোধন করেছিলেন। তারপর থেকে মানুষজনদের চার বেলা ভালো মতো পানীয় জল থেকে শুরু করে ব্যবহার্যুক্ত জল দিতে পারি। এই নির্বাচনের পর আমার ইচ্ছে আছে মানুষজনদের পাঁচবেলা জল দিতে চাই।”
তিনি জানান করোনাকালে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা জরুরি ওষুধ, খাওয়ার সব কিছু পৌছিয়ে দিয়ে এসেছেন। কোনো বিষয় নিয়ে কোনো খামতি রাখেন নি তিনি। 
এছাড়াও তিনি চিন্তা ভাবনা করেছেন নতুন উন্নয়নমূলক কাজ করার। চিনার পার্ক, হালদিরাম, এই সংলগ্ন এলাকায় একটা পাম্পের ব্যবস্থা হচ্ছে যাতে এয়ারপোর্টের জমা জলগুলোকে টেনে বার করে আনবে।

Journalist Name : Payel Das

Tags:

Related News