দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা রাখেন এই মহীয়সী নারী চলুন জেনে নিই তার কাহিনী

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

নগর কলকাতার  জমিদার পানসী ভাসিয়েছেন। গঙ্গার তীরে তীরে  নদীলগ্ন ছোট ছোট গ্রাম । রাজচন্দ্র  ধনী জমিদার পুত্র হলেও তিনি ব্যাবসায়ী  পরিবারের  সন্তান, জাতীতে নমঃশূদ্র। কলকাতা  তখন  মেতে আছে বাইজি নাচে গানে। যুবক রাজচন্দ্রের মাথায় নানান চিন্তা ঘুরে চলেছে; নাগরিক সমাজে পরিবারের প্রতিষ্ঠা্‌র প্রশ্ন নানা ভাবে মাথায় ঘুরে ছলেছে। হঠাৎ রাজচন্দ্রের চিন্তায় ছেদ পড়ল নদীর পারে কোন এক বালিকা দাঁড়িয়ে আছে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রাজচন্দ্র। 
এ যেন বালিকা নয় তরান্বিত গঙ্গা। এ যেন বহুকাল আগে রাজা শান্তনুর নদীতীরে দেখা নদীকন্যা গঙ্গার। শ্রেনীগত ভেদাভেদ গেল মুছে। রাজচন্দ্র নিস্তরঙ্গ গ্রাম থেকে কুটিরবাসী বালীকা রাসমনী কে নিয়ে গেলেন নগর কলকাতার অট্টালিকায়। মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল রাসমনীর জীবন; মা তাকে আদর করে ডাকত রানী; তা যে এমন করে সত্য হয়ে উঠবে তা হয়তো রানী কখনও ভাবেনি।

কিন্তু এখানেই শেষ নয় এই বালিকা একদিন যে হয়ে উঠবে হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের পীঠস্থানের নির্মানকারি তা তখন কে জানতো। অট্টলিকা বাসী রানী অলিন্দে দাঁড়িয়ে  হালিশহরের ছোট্ট গ্রামকে যে ভাবতেন তা বোঝা যায় যখন তিনি  ইংরেজ সরকারের সঙ্গে লড়াই করেন দরিদ্র মাঝিদের জন্য। সাধারন মানুষের জন্য তৈরি করেন পুরী যাওয়ার রাস্তা। মধুমতি নদীর সঙ্গে গঙ্গার যোগ করতে লক্ষাধিক টাকা খরচ করেন গরিব চাষিদের জন্য। কিন্তু রানী হওয়ার সাথে সাথে রুপকথার মত জীবন বড় সুখে কাটতে লাগলো এমন রূপকথার মত শেষ কিন্তু হয় নি। একের পর এক ঝড় ঝড় আসতেই থাকে।

মনে করা যাক তাঁর বিয়ের পরের কথা এক ছোট্ট গ্রামের মেয়ে কেমন করে মানিয়ে নিয়ে ছিল কলকাতার নাগরিক জীবন। তারপরে সেই সময় তাঁর চার কন্যা; কোনো পুত্র না থাকার জন্য তাকে কত কথা শুনতে হয়েছিল কে জানে। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে রাজচন্দ্র মারা যান। এত কম বয়েসে বৈধব্য নেমে আসার যন্ত্রণা, এও মেনে নিতে হয়েছে তাকে; মেনে নিতে হয়েছিল মেয়ের মৃত্যু কে।রানী রাসমনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৮৫৫ ভবতারিনী মন্দির। এই মন্দির কে ঘিরেই কলকাতায় শুরু হয়েছিল হিন্দুধর্মের পুনরুত্থান। ব্রাম্ভ ধর্মের ক্রমশ আগ্রাসনে কোণঠাসা সনাতন হিন্দু ধর্ম। প্রয়োজন ছিল সেই সময় পুরাতন ধর্মের সংস্কারের। চতুর্দশ শতকে নবদ্বীপে শ্রী চৈতন্যকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মের নবজাগরণ ঘটেছিল। 
রানী রাসমনী শিক্ষায়ও রেখে গেছিলেন তাঁর অবদান; হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়  দিয়েছলেন অর্থ সাহায্য। এইভাবেই শুধুমাত্র একজন রাজার রানী না হয়ে থেকে নিজের কাজের মধ্য দিয়ে নিজের নাম কে তিনি করেছিলেন সার্থক। শুধু নামে রানী নয়; কর্মেও রানী রানী  রাসমনী।

Journalist Name : Rakhi Halder

Related News