Flash news
    No Flash News Today..!!
Wednesday, May 15, 2024

ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন, জেনে নিন

banner

##Pravati Sangbad Digital Desk::

নারীদের ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রতিবছর প্রায় ২.১ মিলিয়ন মহিলা সারা বিশ্বে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এক পরিসংখ্যানমতে, কেবল ২০১৮ সালে পৃথিবীতে ৬ লাখ ২৭ হাজার মহিলা স্তন ক্যানসারে মারা যান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়লেও ইদানীং অল্প বয়সীদের মধ্যেও এ ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন স্তন ক্যানসারের হার বেড়েই চলেছে।
আমরা জানি, ক্যানসার চিকিৎসার সাফল্য এবং এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করে রোগটি কোন পর্যায়ে নির্ণিত হচ্ছে তার ওপর। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে এটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ রোগের লক্ষণগুলো জানা প্রত্যেক নারীর জন্যই আবশ্যক। আবার চিকিৎসার তুলনায় এই রোগের প্রতিরোধই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। তাই এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে এমন বিষয়গুলো জেনে রাখাও জরুরি যাতে সেগুলো পরিহার করা সম্ভব হয়।

স্তন ক্যানসার কি?
আমাদের শরীরের যেকোনো স্থানের কোষগুলো যখন খুব দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন সেগুলো একটি অস্বাভাবিক চাকা বা পিণ্ড তৈরি করে। এ ধরনের চাকা বা পিণ্ডকে সাধারণ ভাষায় টিউমার বলা হয়। টিউমার দুই ধরনের হতে পারে, বেনাইন বা অক্ষতিকর এবং ম্যালিগন্যান্ট বা ক্ষতিকর। বেশির ভাগ স্তন টিউমারই বেনাইন; মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হল ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যাকে আমরা ক্যানসার বলে থাকি।

এই রোগের প্রতিকারের উপায় কি? 

এই রোগে সার্জারি করাই সবচেয়ে ভালো ঊপায়। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদির সাহায্যেও এই রোগ সারিয়ে নেওয়া যায়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা করা প্রয়োজন।  

স্তন ক্যান্সার এড়ানোর উপায়:
যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।

১. রিক্স ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন: ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
২. ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
৩. যে সমস্ত নারীরা শিশুদের স্তন্যপান করান, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কম থাকে।
৪. টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।
৫. সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।
৬. ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
৭. যিনি রোজ নিয়ম করে শরীর চর্চা করেন, তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
৮. সমীক্ষা বলছে, সপ্তাহে ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট দ্রুতবেগে হাঁটলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। 

স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা:
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
১। অপারেশন (সার্জারি)।
২। ওষুধ (কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি)।
৩। রেডিওথেরাপি।
ক্যানসারের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসকেরা একাধিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকেন। যেমন অপারেশন এবং তারপর কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি অথবা অপারেশনের আগে বা পরে কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি দেওয়া হতে পারে।

১. অপারেশন (সার্জারি)- প্রাথমিক স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ। টিউমারটির আকৃতির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সার্জারির মাধ্যমে টিউমার ও তার আশপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারণ করেন।
চিকিৎসক সাধারণত দুটি উপায়ে অপারেশন করে থাকেন
ক. স্তনে ক্যানসারের অংশটুকু অপসারণ (লাম্পেকটমি)।
খ. সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ (মাস্টেকটমি)।
অপারেশনের সময় যদি কোনো লসিকাগ্রন্থিতে ক্যানসার থেকে থাকে, তাহলে সার্জন সাধারণত সেটিও অপসারণ করে থাকেন।
২. রেডিওথেরাপি- রেডিওথেরাপি উচ্চশক্তির এক্স-রে ব্যবহার করে ক্যানসার–আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে। প্রায় ক্ষেত্রেই অপারেশনের পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এটি ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়।
৩. কেমোথেরাপি- কেমোথেরাপিতে ক্যানসারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ক্যানসারবিরোধী (সাইটোটক্সিক) ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
৪. টার্গেটেড থেরাপি- কেমোথেরাপি এবং হরমোনাল থেরাপি ছাড়াও নতুন আরও কার্যকর চিকিৎসা হল টার্গেটেড থেরাপি, যা স্বাভাবিক কোষগুলোর ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট কোষ ধ্বংস করতে পারে। এ ছাড়া ক্যানসারের বৃদ্ধি বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে।
কখনো কখনো টার্গেটেড থেরাপি সেই সব জায়গায় কাজ করে, যেখানে কেমোথেরাপি কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। টার্গেটেড থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির তুলানায় সীমিত। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ জনে ১ জন নারীর বিশেষ প্রোটিন এইচইআর টু (HER2) পজিটিভ থাকে এবং এ ধরনের ক্যানসার অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় আগ্রাসী হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রোটিনকে লক্ষ্য করে অনেক ধরনের টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাস্টুজুমাব, পারটুজুমাব, ট্রাস্টুজুমাব এমটানসিন, ল্যাপাটিনিব ইত্যাদি।

মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেক দিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনর্বার দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তাছাড়া অ্যাডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকনস্ট্রাকশনও করা হচ্ছে। 

Journalist Name : SANGITA RANA

Tags: