গতকাল
দীপাবলীর সন্ধ্যায় প্রয়াত হলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত
ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার প্রাক্তন
মেয়র সুব্রত মুখার্জি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল
৭৬ বছর।
পঞ্চায়েত
ছাড়াও আরো চারটি দফতরের
দায়িত্ব ছিল তার হাতে।
গতকাল এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায়
মৃত্যু হয় তার। তাকে
দেখতে বাড়ির পুজো ফেলে ছুটে
যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতাল
সূত্রে জানা গেছে দুপুরে
ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। তারপর
সিপিআর দিলেও আর সাড়া মেলেনি।
ওই দিন রাতেই দেহাবসান
ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের
ছায়া নেমে আসে রাজনৈতিক
মহলে।
১৯৪৬
সালের ১৪ ই জুন
বজবজের সারেঙ্গাবাদে জন্ম হয় সুব্রত
মুখার্জির। কলকাতার কলেজে পড়াকালীন ষাটের দশকে কংগ্রেসের ছাত্র
সংগঠনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
সেই থেকেই রাজনীতিতে পদার্পণ। রাজনৈতিক সূত্রে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে। সত্তরের দশকে প্রিয়ব্রত জুটি
ছিল ছাত্র রাজনীতির এক জনপ্রিয় নাম।
পরে সেই জুটিতে যোগ
হয় আরেক নাম - সোমেন
মিত্র।
বাংলা
রাজনীতিতে একসঙ্গে পথচলা শুরু প্রিয়-সোমেন-
সুব্রত ত্রয়ীর। এরপর রাজনীতির রং
পাল্টেছে। দল আলাদা হয়েছে
এই তিন ত্রয়ীর। তবে
তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল অটুট। দীর্ঘদিন
হাসপাতালে থাকার পর প্রয়াণ ঘটে
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। গত বছর জুলাই
মাসে সৌমেন মিত্র শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দুই বন্ধুকে হারানোর
কষ্ট ভাগ করে নিয়েছিলেন
তিনি। গতকাল তিনি ও বিদায়
নিলেন।
রাজনীতিতে প্রবেশ করে একসময় ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন সুব্রত মুখার্জি। তবে রাজ্যস্তরে তিনি ছিলেন যথেষ্ট জনপ্রিয় এক নেতৃত্ব। কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পদে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। ২০০০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি কলকাতার মেয়র পদে আসীন ছিলেন। বাদ সাধল ২০০৫ সালে তৃণমূল নেত্রীর সাথে বিরোধ।
তৃণমূল
ছেড়ে তিনি পৃথক মঞ্চ
গঠন করেছিলেন। কংগ্রেসের সাথে জোট করে
তিনি ঘড়ি চিহ্ন নিয়ে ভোটে দাঁড়ান। জিতেও
যান তবে তার মঞ্চ
ধরাশায়ী হয়। পাঁচ বছর
পর কলকাতা পুরসভায় বামফ্রন্ট জিতলে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার কংগ্রেসে ফিরে
যান তিনি।
ষাটের
দশকে কংগ্রেসের রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিয়ে উত্থান সুব্রত মুখার্জির। ১৯৭২-১৯৭৭ পর্যন্ত
রাজ্য তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরের
মন্ত্রী ছিলেন তিনি। কলকাতার ৩৬ তম মেয়র
দিল্লীর দরবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের
অন্যতম শিক্ষাগুরু বলা হয় সুব্রত
মুখার্জীকে।
বাংলার
রাজনীতির তিন নক্ষত্র প্রিয়
সৌমেন সুব্রত ত্রয়ীর দুইজন আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন।
শেষ নক্ষত্র পতন হলো গতকাল।
যদিও শেষ সময়ে এই
ত্রয়ী পৃথক দলের প্রতিনিধি
ছিলেন।