আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বামপন্থা দেখিঃ তাপস চ্যাটার্জি

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

তাপস চ্যাটার্জি, যিনি একজন রাজারহাট নিঊটাউনের সুপরিচিত বামপন্থী রাজনীতিবিদ, বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক এবং বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র।  সিপিএম এ থাকাকালীন রাজারহাট-গোপালপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন এবং দীর্ঘদিনের বিধায়ক। তৃণমূলে যোগদান করার পর তিনি বিধাননগর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন। 
আজ শীতের সকালে  প্রভাতী সংবাদের প্রতিনিধি আমরা পায়েল দাস আর স্বর্ণালী পাল পোঁছে গেলাম সেই ডেপুটি মেয়র তাপস চ্যাটার্জির বাড়িতে- 
তাপস চ্যাটার্জির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে আমি পায়েল দাস ও ক্যামেরায় স্বর্ণালী পাল… 
*নমস্কার দাদা, আপনার পলিটিক্যাল জার্নি নিয়ে যদি একটু বলেন? 
  >> নমস্কার। পলিটিক্যাল জার্নি মানে আমি ৩৭ বছর ধরে এলাকায়  জনপ্রতিনিধি আর ৪০ বছর রাজনীতি করছি। এই অঞ্চলে ২১ বছর বয়স থেকে ছাত্র মেম্বার প্রধান, মিউনিসিপালিটি চেয়ারম্যান ভাইস-চেয়ারম্যান বিধায়ক হিসেবে এই অঞ্চল জুড়ে কাজ করছি।
 *  এতবছর বামপন্থী রাজনীতি করে এসেছেন আর ২০১৫ তে এসে আপনি ডানপন্থী দল তৃণমূলে যোগ দিলেন। এতে আপনার আদর্শগত বিচ্যুতি বা মতাদর্শের পরিবর্তন কেন হয়েছে?
>> সিপিএম অবাস্তব পার্টি হয়ে গেছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে বামপন্থা দেখি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো যে প্রকল্পগুলি রয়েছে; সেগুলি আমি মনে করি বামদর্শনের অনুরূপ। এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসই একটা মঞ্চ।
 *অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে, এই যে ক্লাস্টার গুলো তৈরি হচ্ছে নিজের পার্টির মধ্যে পার্টিটাকে উইক করে দিচ্ছে না?
>> গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে পার্টি আরো উন্নত হয়। কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করেছি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর আর সেটা এখন অনেকটাই কমেছে। একটা গণতান্ত্রিক দলের মতবিরোধ থাকবেই, মতান্তর থাকবে সেই মতবিরোধ, মতান্তরকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই সমস্ত কিছু কাটিয়ে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি একসঙ্গে চলার এবং চলছিও। কোন দল ভালো করে এগোচ্ছে; তা ফলাফলেই দেখে নেবেন।
 *অনেক সময় এ রকম দেখা যাচ্ছে যে কেউ রিজেক্ট করছে, আবার জয়েন করছে যেমন সব্যসাচী দত্ত কুইট করলেন আবার জয়েন করলেন………?
>> দেখুন ওটা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ব্যাপার। সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কি সিদ্ধান্ত নেবেন আমিতো তা বলতে পারব না। নিশ্চয়ই তিনি কোনো ভালো বুঝেছেন, তাই দল পরিবর্তন করেছেন।
 
* এতে আপনার কি মনে হয় লোকেদের কিছুটা বিলিফ চলে যাচ্ছে?
>> আমি এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে হবে। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
 * নতুন যারা ক্যান্ডিডেট আসতে চলেছে, পার্টিতে জয়েন করতে চলেছে তাদের আপনি কি বার্তা দিতে চাইবেন?
>> পার্টি সহকর্মী যারা হবে তাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পার্টি সবার জন্য দ্বার খোলা রাখে। পার্টির নেতৃত্বেই ঠিক করে নেবে, কাকে নেবে না নেবেন। যখন সে পার্টিতে জয়েন করবে তখন সে একসঙ্গে কাজ করবে, এর মধ্যে ব্যক্তিগত ঝগড়ার কোনো বিষয় নেই আর ব্যক্তিগত মতামত এর বিষয় নয়। আমি একটা রাজনৈতিক আদর্শের উপর দিয়ে রাজনীতি করি সেখানে যে সহকর্মী হবে তাকে এটি মেনে নিতে হবে। আমাদের যে কজন প্রার্থী আছে অর্থাৎ ৪১ জন প্রার্থীর সমর্থনেই আমরা বলব। নিউটাউন বিধানসভায় ১১ জন প্রার্থী আছে। সেই ১১ জন প্রার্থীর দায়িত্ব আমাদের। আমাদের সেইসব প্রার্থীকে আমরা সমর্থন করবো।
 * বিরোধী পার্টির সাথে কিভাবে মোকাবিলা করতে চাইছেন?
>> বিরোধীরা কোনো কোভিডের সময়ও ছিল না। অন্যকোনো সময় তাদের দেখা যায়নি। বিরোধীদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই জন্য বিরোধীদের কোনো প্রশ্নই নেই। আমরা এই অঞ্চলে এমনভাবেই কাজ করি। যেখানে বিরোধীরা আমাদের ডিস্টার্ব করে। কেননা আমরা মানুষের সুখে দু:খে সবসময় পাশে থাকি।
 *এই অঞ্চলে আস্তে আস্তে দেখলাম অনেক লাল পতাকা আছে, লাস্ট টাইম যে কলকাতা পৌরসভার ভোট হল সেখানে দেখা গেল যে সিপিএম বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সেম প্রেডিকশনে আপনাদের কি মনে হচ্ছে? এই ইলেকশনেও এরকম কিছু হতে পারে?
>> কে সেকেন্ড, কে থার্ড হবে সেটা কোন বিষয় নয়। সিপিএমেরই ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল, সেটাতে যদি বিজেপি দুর্বল হয় সেটা আবার তাহলে সিপিএমে ব্যাক করে আসবে। এর মধ্যে আমাদের কোনো বিষয় নেই। আর ওটা কোনো ফ্যাক্টরও  নয়। আর দেখুন গণতান্ত্রিক দল; সবাই ফ্ল্যাগ লাগাতেই পারে। ফ্ল্যাগ লাগানো তো আর আমরা বন্ধ করতে পারি না। শক্তির দিক থেকে আমরা খুবই বেশি। বিধানসভা নির্বাচনে ব্যপক ফলাফল করেছি। এই অঞ্চলটি চিরকালই আমার। আমি অনেকদিন ধরে এখানে নিজের মত করে কাজ করছি,  এখানকার ক্লাব সংগঠন বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে। যদি বিজেপি দুর্বল হয় তাতে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু সিপিএম কোনো পরিবিত্ত  নয়, সিপিএমের রাজনীতির সুবিধাবাদী হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে গেলে  বিরোধী সিপিএম একা পারবে না। তাকে অন্য কারো সাথে যুক্ত হতে হবে। মমতা ব্যানার্জিকে দুর্বল করে, ভারতবর্ষে আজকে মমতা ব্যানার্জির সাথে জোট না করে অন্যকারো সাথে জোট করে বিজেপিকে শক্তিশালী করে দেওয়া। মানে ধরুন, কেউ হচ্ছে ২০ নম্বর পাওয়া থেকে ৩০ নম্বর পাওয়া ছাত্র। আমরা হচ্ছি ৮০ থেকে ৯০ পাওয়া ছাত্র।
 
* আর উন্নয়নের বিষয়ে কিছু বলতে চাইছেন?
>> আমরা ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করেছি। আগামী দিনের কাজের জন্য একটা “দশদিগন্ত” ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে আমাদের দল থেকে। আমাদের বলা আছে যে, কিভাবে কিভাবে বিষয়টাকে রাখব-করব। ‘দশদিগন্ত’তে বলা আছে যে, আমাদের একটা অ্যানিভার্সারি কমিটি হবে। গিভ-এন্ড শেয়ার পদ্ধতিটি হবে। মানুষের সাথে কথা বলে সেগুলো নিষ্পত্তি করা হবে। জলনিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে।
 *সিন্ডিকেটের ব্যাপারটা নিয়ে অভিযোগ করছে বিরোধীরা, এটা নিয়ে আপনার কী মত?
>> আমাদের দল থেকে সিন্ডিকেট করা হয় না। পাড়ার বেকার ছেলেরা ইট, বালি, সিমেন্টের ব্যাবসা করলে করতেই পারে। এতে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নেই। রাস্তাঘাট নিয়ে আমরা ব্যাপক পরিমাণেই কাজ করেছি। আমরা আবার টাকা পেলেই রাস্তাঘাট উন্নয়ন-এর কাজ করব।

Journalist Name : Payel Das

Tags:

Related News