#Pravati Sangbad Digital Desk:
সন্ধ্যা মুখার্জি ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি প্লেব্যাক গায়িকা এবং সঙ্গীতজ্ঞ, যিনি বাংলা সঙ্গীতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি ২০১১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান বঙ্গ বিভূষণ পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে জয় জয়ন্তী এবং নিশি পদ্মা চলচ্চিত্রে তার গানের জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক গায়কের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিলেন।
যদিও শাস্ত্রীয়ভাবে প্রশিক্ষিত, তার কাজের বেশিরভাগই বাংলা আধুনিক গান নিয়ে গঠিত ওনার সমস্ত গানের স্রষ্টা। তিনি মুম্বাইতে হিন্দি গান গেয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন, ১৯৫০ সালে তারানা চলচ্চিত্রের একটি গান দিয়ে শুরু করেন। তিনি প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে ১৭টি হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তাঁর নিজের শহর কলকাতায় ফিরে আসার এবং স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বাঙালি কবি শ্যামল গুপ্তকে বিয়ে করেন। শ্যামল গুপ্ত তাঁর জন্য অনেক গানের কথাও লিখেছিলেন। এত গুণের আধিকারিক যিনি তাঁর যে ডান কানের সমস্যা ছিল সেই কথা হয়তো অনেকে জানেনই না, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ডান কানের সমস্যা ছিল যার থেকে উনি ডান কানে শুনতে পেতেন না, ছোটবেলার এর ভয়ানক দুর্ঘটনার কারণে তাঁর ডান কানটি নষ্ট হয়ে যায়।
এবার সেই ঘটনার এক ছোট্ট বিবরণী দেওয়া যাক, ঢাকুরিয়ার ব্যানার্জী পাড়ায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি, সেই দোতলা বাড়ির পাশে নিচু ছাদ , সেখানে শাড়ি শুকোতে দেওয়া হত। যথারীতি ছোট্ট সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়েও বাড়ির কাজে সাহায্য করতেন যেভাবে বাড়ির আর পাঁচটা মেয়েরা করে থাকে, তখন তাঁর বয়স ১৭ তখনই ঘটে যায় বিপত্তি, তখনকার দিনে শাড়ি যাতে উড়ে না যায় একটা বড় ইঁট চাপা দেওয়া হত শাড়ির ওপরে। আর বিকেলে শাড়ি শুকিয়ে গেলে তোলার দায়িত্ব ছিল ছোট্ট সন্ধ্যার। কিন্তু উনি বুঝতে পারেননি নিচে দাঁড়িয়েই শাড়িতে টান মারলেন এমন, যে শাড়ি না এসে আস্ত ইঁটটাই তাঁর মাথায় এসে পড়ে। সে এক সাংঘাতিক অবস্থা। তড়িঘড়ি ওনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, সেরম বড় কোনো ক্ষতি হইনি তবে ওনার ডান কানটি নষ্ট হয়ে যায় চিরকালের জন্য। তারপর কত ডাক্তার, কত চেষ্টা কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সে সময় কানের মেশিন এত ভাল ছিল না। শেষ পর্যন্ত এক কানে না শুনেই একের পর এক গান গেয়েছেন তিনি। তিনি যেন এক ঈশ্বরের দান, যিনি এত বড় গুণের ভাগীদার তাঁর গানের কেরিয়ারে ওপরে ওঠা স্বয়ং ভগবানও আটকাতে পারেননি, সে যত প্রতিকূলতাই থাক না কেন। তাঁর নামই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কার্ডিয়াক অসুস্থতা, বহু-অঙ্গের কর্মহীনতা এবং ফিমার হাড়ের ফ্র্যাকচার সহ কোভিড -১৯ এর জন্য ইতিবাচক পরীক্ষা করেছিলেন তিনি। জানুয়ারিতে, গায়িকা শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করেছিলেন যার পরে তাঁকে তার বাসভবন থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষরক্ষা আর হলনা, ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ উনি মারা যান, তাঁর এভাবে চলে যাওয়াটা সঙ্গীত ধারার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, তবে ভবিষ্যৎ গায়ক গায়িকা প্রজন্ম ওনার আধিপত্যকে ধারাবাহিকতার সাথে মেনে চলবেন এটাই কাম্য।
Journalist Name : Nabanita Maity