দ্য 'স্যার' অফ ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

তিনি এই সময়ের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। সেটা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – যেকোনো ফরম্যাটের জন্যই সত্যি।
তিনি বদলে দিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসে ফিল্ডিংয়ের মানচিত্র , তিনি যেকোনো দলের কাছে সম্পদ , এখনো যেকোনো পজিশন থেকেতার উইকেট টু উইকেট বুলেট থ্রো হলেই বিগস্ক্রিনে শুধুমাত্র আউট শব্দটি ফুটে ওঠে । আর তার অসম্ভব সব ক্যাচের রিপ্লে দেখলে খালি অবাক হয়ে ভাবতে হয়-এসব মানুষের পক্ষেও সম্ভব !
একটা সময় তার পরিবারকে দিনে ১০ টাকাতে সংসার চালাতে হতো। আর আজকে তিনি ৪৫ কোটিরও বেশি টাকার মালিক।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার তিনি। অবশ্য এই সফলতা একদিনে আসেনি, দিনে দিনে নিজের কঠোর পরিশ্রমই তাকে আজ এই পর্যায়ে এনেছে। অভাবের সাথে লড়াই করেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে। দারিদ্রের, বঞ্চনার ইতিহাস পেছনে ফেলে তিনি হয়ে উঠেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। হ্যা, তিনি রবীন্দ্র সিং অনিরুদ্ধ সিং জাদেজা। যাকে বিশ্ব ক্রিকেটে রবীন্দ্র জাদেজা হিসেবেই চেনে। আদর করে সতীর্থরা ডাকে জাড্ডু এবং নিজেই নিজের নামের আগে মজা করে ‘স্যার’ বসিয়ে ফেলেছেন-স্যার জাদেজা।
রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ওয়াসিম জাফরের টুইট, ‘রবীন্দ্র জাদেজা শুধু ফিল্ডিং দিয়ে একটা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। ব্যাট হাতে ম্যাচ জেতাতে পারেন। সিরিজ জেতাতে পারেন বল হাতে। একজন নিখুঁত অলরাউন্ডার।’
সতীর্থ রবীন্দ্র জাদেজাকে শুধু ধোনি নন, পুরো ভারতই ‘স্যার’ ডাকে। এমনকি কয়েক দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন। সেখানেও তিনি জাদেজাকে ‘স্যার’ ডেকে বসেছেন! তবে ধোনির প্রতি জাদেজার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। শুরুতে একের পর এক ব্যর্থতায় ‘স্যার’ শব্দটা সেঁটে গিয়েছিল। ধোনিই ডেকে উপাধিটা উল্টো জনপ্রিয় করে তুলেছেন। ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধানক্রিকেট তারকা রবীন্দ্র জাদেজা। টেস্ট, ওডিআই ও টি২০, তিন ফর্ম্যাটেই দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার তিনি। বর্তমানে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে দলের নির্ভরযোগ্য অল রাউন্ডার হয়ে উঠেছেন জাড্ডু।

একটি পরিসংখ্যান আছে বেশ মজার—‘আর জাদেজা’ নামে সাতে নেমে এর আগে আরও এক ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ার সেরা ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছেন। তিনি ভারতের কিংবদন্তি মহারাজ রনজিৎ সিং। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল রনজিৎ সিং জাদেজা। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৫টি টেস্ট খেলা রনজিৎ সিং ১৮৯৭ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাতে নেমে ১৭৫ রান করেন। ২০০৯ এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে স্লো ইনিংস খেলে হয়েছিলেন সমালোচিত। এমনও মন্তব্য হয়েছিলো যে, তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য উপযুক্ত নন। ২০০৯ এর শেষ দিকে ইউসুফ পাঠানের অফ ফর্মের কারণে ওয়ানডে দলে সুযোগ মেলে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতেই চার উইকেট শিকার করে নির্বাচত হন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। ২০১২-১৩ রঞ্জি ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম করে সুযোগ পান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে। ৪র্থ নাগপুরে ইংলিশদের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে শিকার করেন ৩ উইকেট। ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অনবদ্য পারফরম্যান্স করে৷ দলকে করেন চ্যাম্পিয়ন। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১২ উইকেট শিকার করে জিতেন গোল্ডেন বল। ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি করেন অপরাজিত ৩৩রান। সেবার আইসিসি ‘টিম অব দ্যা টুর্নামেন্ট’ এর সদস্য হিসেবেও জায়গা পান তিনি। একের পর এক দূর্দান্ত পার্ফরমেন্সে ২০১৩ সালে আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র‍্যাঙ্কিয়ের শীর্ষস্থান লাভ করেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও ইনজুরিতে মাত্র ৮ ম্যাচে শিকার করেন ৯ উইকেট। পরের সিরিজেই বাংলাদেশের বিপক্ষে বাজে পার্ফরমেন্সের কারণে জায়গা হারান দল থেকেও। সেবার রঞ্জি ট্রফিতে ৪ ম্যাচে ৩৮ উইকেট ও ২১৫ রান করে আবারো নজর কাড়েন নির্বাচকদের। সুযোগ পেয়ে যান পরের দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজেও। ভালো পার্ফমেন্স করে সুযোগ পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে। তিনি এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন ইতিহাসের প্রথম দুই স্পিনার হিসেবে আইসিসি বোলিং র‍্যাঙ্কিয়ে ১ নম্বর টেস্ট বোলার নির্বাচিত হন। দ্রুততম বামহাতি বোলার হিসেবে তিনি পৌঁছে যান ১৫০ উইকেটের মাইলফলকে। ২০১৮ সালে টেস্টে দেখা পান ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের। ২০১৯ সালে ৩য় ভারতীয় হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০০ রান ও ১৫০ উইকেট শিকার করেন তিনি। এরপর জায়গা পান ২০১৯ বিশ্বকাপেও। সে বছরই অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে স্পর্শ করেন ২০০ উইকেটের মাইলফলক। তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলে) এখন পর্যন্ত খেলেছেন রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। ২০১২ আইপিএলে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার। টেস্ট বোলিং র‍্যাঙ্কিয়ে অনিল কুম্বলের পর একমাত্র ভারতীয় হিসেবে হয়েছেন এক নম্বর বোলার। এছাড়াও তার দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের কারণেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। শুধু ফিল্ডিংই নয় ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরির পর তার ‘সোয়ার্ড’ সেলিব্রেশনও এখন বেশ জনপ্রিয়।

জাদেজা ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল বিয়ে করেন রিভা সোলাঙ্কিকে। পরের বছর ২০১৭ সালে জুনে জন্ম দেন একটি ফুটফুটে কণ্যা সন্তানের। ২০১৯ সালে তিনি অর্জুনা অ্যওয়ার্ড পান। ব্যাট-বল হাতে কাগজে-কলমে পরিসংখ্যান গ্রেট ক্রিকেটারদের আশেপাশে না হলেও জাদেজা নিজের অলরাউন্ড পার্ফরমেন্সে ভারতীয় দলকে জিতিয়েছেন অনেক ম্যাচ। তবুও নির্বাচকদের খেয়ালিপনা কিংবা বিভিন্ন কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন বার বার। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পার্ফরম করেও অনেক সময়ই মন জয় করতে পারেননি নির্বাচকদের। মায়ের মৃত্যু কিংবা পরিবারে আর্থিক অনটন কোনোটিই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হতে। সবসময় হাসিমুখ থাকা স্যার জাদেজা নিজের অলরাউন্ড পার্ফরমেন্সে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন আরো উচ্চ পর্যায়ে। ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার হয়তো ক্যারিয়ার শেষে গ্রেটদের তালিকা স্পর্শ করতে পারবে না। তবে সঠিক পরিচর্যা আর নিয়মিত সুযোগ পেলে নিজেকে রেখে যাবেন স্বরণীয়দের তালিকায়।

Journalist Name : Avijit Das

Related News