জানুন বাঙালীর বছরের শেষ উৎসবের রীতিনীতি

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

প্রবাদেই আছে, বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই কথাটার সততা বাঙালী ভালো ভাবেই পালন করে। বাংলার ক্যালেন্ডার এর উৎসব শুরু পয়লা বৈশাখ দিয়ে আর শেষ চৈত্র সংক্রান্তি দিয়ে। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। বাঙালীর নানা উৎসবের মধ্যে চড়ক একটি অন্যতম উৎসবে। এ পূজার বিশেষ অঙ্গের নাম নীলপূজা। চড়ক পূজার আগের দিন চড়ক গাছকে ভাল করে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর জলভরা একটি পাত্রে শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা 'বুড়োশিব' নামে পরিচিত। এই পুজো করেন পতিত ব্রাহ্মণরা। চড়কগাছে সন্ন্যাসীদের চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জ্বলন্ত বাণ শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিও রয়েছে। এছাড়াও কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, গায়ে ধারালো জিনিস ফোটানো, ধারালো কিছুর ওপর লাফানো, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ হিসেবে মনে করা হয়। আবার, চড়ক বাংলার এক প্রধান লোকউৎসব। দুই বাংলাতেই চৈত্র মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হয় চড়ক পুজো। চৈত্র মাসে শিবের ভক্তরা ভোলানাথের উপাসনা করে থাকেন। চড়ক কীভাবে শুরু হল, তা নিয়ে ধন্দ আছে। গ্রামীণ লোককথায় বলা হয়, পরম শিবভক্ত বাণরাজা যুদ্ধ করেছিলেন দ্বারকার অধিপতি তথা বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর অমরত্ব পাওয়ার আশায় তিনি চৈত্র মাসের শেষ দিনে অনুচরদের নিয়ে নাচে গানে আত্মহারা হয়ে নিজের শরীরের রক্ত বের করে সমর্পণ করেন শিবের উদ্দেশ্যে। সেই ঘটনার স্মৃতিতেই প্রত্যেক বছর এই দিনে চড়ক উৎসব পালন করা হয়। মূলত এটি হিন্দুদের উৎসব, তবে মুসলমানের অংশগ্রহণও দেখা যায় কোনও কোনও জায়গায়। যেমন হাওড়া জেলায় পির জঙ্গল বিলাসের দরগায় হয়ে থাকে শিবের গাজন। 
চড়ক পুজোর উৎসবে যারা অংশ নেয়, তারা বিভিন্ন রকমের দৈহিক যন্ত্রণা সহ্য করে মনোরঞ্জন করে, যা ধর্মের অঙ্গ বলে বিশ্বাস করা হয়। এই সব পুজোর মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, নদীয়া, তারকেশ্বর, বাঁকুড়া, হুগলী-এর বেশ কয়েকটি গ্রামে এই উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও আরও অনেক জায়গায় চড়ক পূজা প্রচলন রয়েছে। মূলত গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। চড়কের জন্য বিশেষ মেলাও বসে।
এই পুজোর কিছু বিশেষ অঙ্গ রয়েছে, যা আজও কিছু কিছু জায়গায় চরম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। যেমন, জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হাঁটা, ছুরি এবং কাঁটার ওপর লাফানো, কুমিরের পুজো, শিবঠাকুরের বিয়ে, আগুনের ওপর নাচ করা, চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি।এই পুজোর ক্ষেত্রে সবথেকে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি তা হল দৈহিক যন্ত্রণা, যাকে এই পুজোর এক বিশেষ অঙ্গ বলে মনে করা হয়। বলা হয় প্রাচীন কৌম সমাজে প্রচলিত নরবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রয়েছে এই পুজোর রীতি-নীতিতে।সর্বপরি এই পুজোর মূলে রয়েছে ভূত-প্রেত এবং পূনর্জন্মের গাঁথা। এই পুজোর অঙ্গ হিসাবে ভক্তরা এবং সাধু-সন্তরা হুড়কো দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘুরিয়ে থাকে। আবার লোহার শলাকা তাদের পায়ে ,হাতে, গায়ে, পিঠে, এমনকি জিহ্বাতেও প্রবেশ করানো হয়। এমনকী কখনও কখনও জ্বলন্ত লোহার শলাকা শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও প্রবেশ করানো হয়। তবে ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ণ করে এই নিয়ম-নীতি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আজও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এইসব নিয়ম-নীতি প্রচলিত রয়েছে।

Journalist Name : Aankhi Banerjee

Related News