বাংলায় কি আবার জেগে উঠছে মাওবাদী?

banner

#pravati sangbad Digital desk:

ভারতে কীভাবে মাওবাদী বা নকশালবাদীদের উত্থান হলো। নকশাল শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কেও বলেছি। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই জারি রাখা মাওবাদীরা আসলেই কতটা শক্তিশালী বা আদৌ তাদের সেই শক্তি আছে কি না এবং তাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত। প্রথম পর্বে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) আলোচনা করা হয়েছে। এটিই এখন ভারতের সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত কিন্তু নিষিদ্ধ মাওবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সিপিআইয়ের সশস্ত্র শাখা হলো পিপল’স লিবারেশন গেরিলা আর্মি।পিএলজিএ-এর সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। ভারতজুড়ে সক্রিয় নকশালবাদীদের (মাওবাদীদের নকশালবাদীও বলা হয়) মোট সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার। তবে এ সংখ্যা ২৫ হাজার বলেও অনেকে উল্লেখ করেন। তবে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা অনেক কম। ভারতের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। এ দুই অঞ্চলে প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ আদিবাসীর বসবাস। এখানকার খনিগুলোর কাজ নতুন করে শুরু হওয়ায় তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে বলে তারা মনে করে। এ ছাড়া তাদের অধিকাংশ বর্গাচাষি বা ভূমিহীন। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে তারা। এ দুই অঞ্চলে মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ খুবই কম। না আছে ভালো রাস্তাঘাট, না আছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ। পানীয় জলের প্রকট অভাব রয়েছে। ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং ওডিশায় সরকার খনিজ সম্পদ তোলার পদক্ষেপ নেওয়ায় স্থানীয় হাজারো বাসিন্দা বসতভিটা হারানোর আশঙ্কায় নিমজ্জিজত হয়।হিংসার রাজনীতি করার জন্য মাওবাদীরা সাধারণ মানুষের দুর্দশার অনুসন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সেই পরিবেশ পরিস্থিতি বাংলায় আজ দূর অতীতের অধ্যায়। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, তা সত্ত্বেও মাওবাদীদের একটি গোষ্ঠী বাংলায় ঘাঁটি গাড়ার জন্য উশখুশ করছে। এজন্য তারা সক্রিয় করতে চাইছে তাদের মহিলা স্কোয়াডটিকে। তাদের যাবতীয় তথ্যাদি এখন সরকারের হাতে। সেইমতো সতর্কও হয়েছে প্রশাসন। সতর্কতা আরও বাড়াতে হবে। খোঁজ নিতে হবে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে কেউ তাদের ব্যবহার করছে কি না। জঙ্গিদের সম্পর্কে সদাসতর্ক থাকতে হবে সাধারণ মানুষকেও। সহযোগিতা করতে হবে সরকারের সঙ্গে। ভারতে উগ্র কমিউনিস্টদের হিংসার রাজনীতির ইতিহাস বলে, সৃষ্টিশীল মননশীল মানবিক কোনও ব্যাপারেই তাদের আগ্রহ নেই। তারা নানাভাবে উন্নয়ন এবং আধুনিক অর্থনীতির বিরোধী। ধারাবাহিক মৃত্যুর রাজনীতি তাদের মূলত ‘গণশত্রু’ পরিচিতিই দিয়েছে।

২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সর্বশেষ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে অশান্ত হয়ে উঠেছিল এই জঙ্গলমহল। মাওবাদীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিল। মাওবাদীরা বামফ্রন্টকে ক্ষমতা থেকে হটানোর ডাক দিয়েছিল। সেখানে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি ছিলেন মূল মাথা। তাঁর নেতৃত্বেই চলছিল মাওবাদীদের তৎপরতা। জঙ্গলমহলকে রূপ দিয়েছিল অনেকটা ‘মুক্ত এলাকা’ হিসেবে। এই জঙ্গলমহলের লালগড়ের জামবনী এলাকায় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর জিন্দাল গোষ্ঠীর একটি স্টিল প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফিরছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাশোয়ান প্রমুখ। ওই সময় মাওবাদীরা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হত্যার জন্য সড়কে পুঁতে রাখে স্থলমাইন। কিন্তু মাইন বিস্ফোরণের নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগে রাস্তা পার হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। তবে পুলিশের পাইলট কার ওই দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দেন, নির্বাচনে তাঁর দল ক্ষমতায় এলে মাওবাদীদের সমস্যার সমাধান করবেন। তাদের দাবিদাওয়া মেনে নেবেন। তাদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবেন। মমতার এই ডাকে সাড়াও মেলে মাওবাদীদের।কিষেণজির মৃত্যুর পর জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও কিছুদিন পর মাওবাদীদের অন্য নেতারা গোপনে শুরু করেন তৎপরতা। এর নেতৃত্ব দেন মাওবাদী নেতা আকাশ। সেই তৎপরতা এখনো চলছে গোপনে জঙ্গলমহলজুড়ে। তবে এই মাওবাদীরা দিনের বেলা জঙ্গলমহলে তৎপরতা চালালেও রাতের বেলা তাঁরা পাশের ঝাড়খন্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভুম জেলায় রাত কাটান। এভাবেই চলছে মাওবাদীদের তৎপরতা।

Journalist Name : Aankhi Banerjee

Tags:

দেশ
Related News