বোলপুরের পৌষ মেলা নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত

banner

#শান্তিনিকেতন:

১২৯৪ বঙ্গাব্দের ২৬শে ফাল্গুন শান্তিনিকেতন আশ্রমের জন্য তৈরি ট্রাস্ট ডিড বা অছিপত্রে রবী পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে এক মেলা বসানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। যাতে তিনি বলেছিলেন  “এই মেলার উৎসবে কোন প্রকার পৌত্তলিক আরাধনা হইবে না কুৎসিত আমোদ-উল্লাস হইতে পারিবে না, মদ্য মাংস ব্যতীত এই মেলায় সর্বপ্রকার দ্রব্যাদি খরিদ বিক্রয় হইতে পারিবে। যদি কালে এই মেলা দ্বারা কোন রূপ আয় হয় তবে তা ট্রাস্টিগণ আয়ের টাকা মেলার কিংবা আশ্রমের উন্নতির জন্য ব্যয় করিবেন।

এই ডিড অনুসারে এবং মহর্ষির ইচ্ছে পূরণের জন্য শান্তিনিকেতন ট্রাস্টি বোর্ড ইংরেজি ১৮৯৪ সাল থেকে এই মেলা করে আসছে। প্রথম দিকে এই মেলার প্রসার বা ব্যাপ্তি এত না থাকলেও ধীরে ধীরে এই মেলা এক মিলন  ক্ষেত্রে পরিণত হয়। বোলপুরবাসী এবং সমগ্র বঙ্গবাসীর কাছেই এক ঐতিহ্য। ৭ই পৌষ সকাল বেলা পৌষ উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে এই মেলার সুচনা হয় এবং চলে ৯ই পৌষ পর্যন্ত। মেলায় বাউল গানের আসর, বেতের জিনিষপত্র দেখলে মনেই হয় না আমরা ২০ শতকে দাঁড়িয়ে আছি। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে অতি প্রাচীন এই মেলা নম নম করে হলেও ২০২০ বাধ সাজল করোনা। ২০২০ সালে মেলার ১২৫ বছর পূর্তি দেখতে পেলো না মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের মেলা। এখন রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের দীর্ঘ প্রচেষ্টাই করোনা অনেকটাই আয়ত্তে, কিন্তু তাতে কি পৌষ মেলা নিয়ে কোন রকম হেলদোল নেই বিশ্বভারতী কতৃপক্ষের।


পৌষমেলা বাঁচাও কমিটি এবং বোলপুর ব্যাবসা সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি বোলপুর পৌরসভাকে জানানো হয়। বোলপুর পৌরসভার পুর-প্রশাসক মাননীয়া পর্ণা ঘোষ বলেন, “ এই বিষয়ে বোলপুরবাসী এবং কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্য মণ্ডিত এই মেলা পুনরায় করার দাবিতে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ এবং উপাচার্য মাননীয় বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মহাশয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনও কোন রকম সদুত্তর আমরা পাইনি, আশা করি তারা এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন। তাঁর মতে বোলপুর পৌরসভা বোলপুরবাসীকে নিয়ে মেলার ১২৫ বর্ষ উদযাপন করতে ইচ্ছুক। তার জন্য পৌরসভা অর্থ দিতে প্রস্তুত। এই বিষয়ে পৌরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ আরও জানান বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ কোন রকম পক্ষপাতিত্ব না করলে বোলপুর সংলগ্ন শিবপুর গ্রামের কাছে গীতবিতান টাউনশিপে পৌষমেলা করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। বীরভূম জেলার তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল মহাশয় এই ব্যাপারে সম্মতি দিলেই আমরা মেলা করার জন্য কোভিড বিধি মেনে পদক্ষেপ গ্রহণ করব বোলপুরের এলাকাবাসী থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর প্রবীণ আশ্রমিক সকলেই পৌরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ চিঠি পেয়েছেন স্বীকার করলেও, মেলা প্রসঙ্গে তারা কোন রকম বক্তব্য রাখেননি।


পৌষমেলা মাঠ সংলগ্ন লজ এবং বিভিন্ন হস্তশিল্পের দোকানের মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, “এই মেলাই শুধু যে রাজ্যের মানুষ বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসেন তা নয়, এই মেলাই দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মানুষ ছুটে আসেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের টানে লাল মাটির টানে। এমনিতেই মেলা নিয়ে পরিবেশ আদালতে মেলা নিয়ে মামলা হয়েছে বহুবার কিন্তু তাতেও এই ঐতিহ্যবাহী মেলা কোন দিন বন্ধ হয়নি। তারা প্রতিবার আদালতের নিয়ম মেনে মেলা করে গেছেন, কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিশ্বভারতী কতৃপক্ষের যে কোন রকমের অনুষ্ঠানে অনিহা, যার কারণে বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব আজ বন্ধ। আমরা ব্যাবসায়ীরা দোল এবং মেলার ওপর ভিত্তি করেই জীবনযাপন করি, কিন্তু এখন যদি বসন্ত উৎসবের সাথে মেলাও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবো। তবে পৌরসভা থেকে যেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ব্যাবসায়ীদের স্বার্থে বোলপুরবাসীর স্বার্থে তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি।

Journalist Name : Sabyasachi Chatterjee

Related News