Flash news
    No Flash News Today..!!
Monday, May 6, 2024

রেকর্ড বুক ও অলিখিত সম্রাট

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

১. একবার পিএসজির হয়ে মেসি এবার কেন ভালো করতে পারেননি, সে ব্যাখ্যাও দেওয়ার চেষ্টা করেন মানচিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলো থেকে পিএসজি বিদায় নেওয়ার পর লিগ আঁ-তে সমর্থকদের রোষের শিকার হন মেসি।

মানচিনির ব্যাখ্যা, ‘এ মৌসুমে সে অনেক গোল করতে পারেনি। এর কারণ সম্ভবত ক্লাব ও বসবাসের জায়গা পাল্টানো। তার আরও সময় প্রয়োজন। কিন্তু আমার মতে, সে-ই বিশ্বসেরা। কাল (আজ রাতে) আমাদের মনোযোগী হতে হবে। কারণ, সে (মেসি) এক সেকেন্ডের মধ্যে খেলা পাল্টে দিতে পারে।’

২.বিশ্বকাপ ফাইনালে হার: পরপর তিনটে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে হার। যে শটটা ৩২ বছরের ব্যর্থতা মুছে দিতে পারত তা উড়ে গেল বারপোস্টের অনেকটা উঁচু দিয়ে। হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাস বলে এর আগে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন মিলিয়ে এতবার ফাইনাল খেলে হেরে যেতে হয়নি কোনো দলকে। যে মুহূর্তে মেসি অবসর ঘোষণা করলেন সেদিন রাতে একটি খোলা চিঠিতে ছোট্ট একটা বয়ান দিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক৷ তাতে লেখা ছিল- " No Leo,you can't quit now, not this way.."
একজন বলেছিলেন মেসিই পারবে। আর্জেন্টিনাকে সাফল্যের রাস্তায় নিয়ে আসতে ও পারবে। আর যদি না পারে তাহলে প্রতিটি ব্যর্থতাকে সহ্য করার যন্ত্রণা ও ওকে পেতে হবে। এই বিশাল রাস্তাটায় হাঁটার সৌভাগ্য সকলের হয় না। মেসির সাফল্যের চেয়েও প্রতিটি ব্যর্থতায় তিনি খুঁজেছেন আলো। তিনি জুয়ান রোমান রিকেলমে। 

৩.ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী রোনালদিনহো ২০০৬ সালে ব্যালন ডি’অর হাতে নিয়ে বলেছিলেন,

'এই ট্রফিতে লেখা আছে, আমি বিশ্বের  সেরা খেলোয়াড়। অথচ আমি খোদ বার্সেলোনারই সেরা নই, ছেলেটাকে দেখলে আমার ম্যারাডোনার কথা মনে পড়ে। গঠনের দিক দিয়েই দু'জনেই খাটো, এবং খেলেও বাম পা দিয়ে। মেসি, ক্রিস্টিয়ানো, কাকা এরা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। বিশেষ করে, মেসির ব্যাপারটা আমাকে মোটেও অবাক করে না। যখন থেকে সে আমাদের সাথে ট্রেনিং করতে শুরু করেছিল, আমরা জানতাম এমনটাই হবে। কোনো একদিন আমি বলে বেড়াবো যে, আমি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের উত্থান দেখেছি। "

২৪ জুন ১৯৮৭,জন্ম নিল ছোট্ট একটা ফুটফুটে শিশু,যে শিশু একদিন দাপিয়ে বেড়াবে ময়দান। ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নীল-সাদা জার্সি গায়ে ফুটবলের সবুজ গালিচা দাফিয়ে বেড়ানোর। ১৪ বছরেই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বেশ কয়েক ধাপ উপরে উঠে গিয়েছিলেন এই মহাতারকা। জুনিয়র টিমে থাকাকালীনই প্রমাণ করে দিয়েছেন নিজেকে। এরপর সুযোগ আসে অনূর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে খেলার। সেখানেও নিজের প্রতিভার ছাঁপ রাখেন কিশোর মেসি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩৪ বছর বয়সেই একজন গ্রেট হওয়ার জন্যে যা যা  জয় করা প্রয়োজন তার, সব কিছুই জয় করেছেন তিনি। একদিকে নরম ঘাসে মোড়া মাঠের সেরা পারফর্মার হয়ে উঠেছেন। আরেকদিকে রেড কার্পেটেও তার দর্শনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন সমর্থকেরা। ফুটবল ফ্যানদের মনের মণিকোঠায় তো রয়েছেনই। বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্খিত পুরুষের তালিকাতেও তার নাম রয়েছে শীর্ষে। পরপর সাতবার গোল্ডেন বল পেয়েছেন। পাশাপাশি জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট।  বর্তমান পুরো পৃথিবীর পছন্দের ফুটবলারের তালিকাতে তর্কাতিতভাবে তিনিই শীর্ষে। বাঙালিদের মধ্যে আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল দ্বন্দ্ব থাকলেও, মেসির ক্ষেত্রে সমস্ত বিরোধিতা ঘুচে যায়। তিনি শুধু ফুটবলার নন। তিনি ভক্তদের কাছে আবেগ। তিনি দেবতুল্য। তিনি লিওনেল মেসি। আজ তাঁর জন্মদিন। ইতিমধ্যেই ফুটবল দুনিয়ায় ভরে গিয়েছে শুভেচ্ছা বার্তায়। তার পথচলা সহজ ছিল না। তার অর্জনগুলো দিয়েই তাকে জানা সহজ, কারণ মেসি ও রেকর্ড, একে অপরের পরিপূরক। 
১৭-বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক। ওই বছরই বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল পেয়েছিলেন। জিতেছিলেন প্রথম লা লিগা শিরোপাও। 

১৮-বছর বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক ও প্রথম গোল, লা লিগায় দ্বিতীয় শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম শিরোপা জয়। 

১৯-বছর বয়সে এল ক্লাসিকোয় ৩-৩ ড্র ম্যাচে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন। 

মেসির বয়স যখন ২০-পেপ গুয়ার্দিওলা বার্সেলোনার প্রধান কোচ হিসেবে আসেন। এরপর লা লিগায় তৃতীয় হয় বার্সেলোনা। 

২১-বছর বয়সে লা লিগায় তৃতীয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় ও কোপা দেল রের প্রথম  শিরোপা জিতেন তিনি। 

২২-বছর বয়সে প্রথম উয়েফা সুপার কাপ, প্রথম ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপের তৃতীয়, লা লিগায় চতুর্থ শিরোপা জিতেন। এই বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও জিতেন; নিজের করে নেন প্রথম ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু-ও। 

২৩- বছর বয়সে পঞ্চম লা লিগা, তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চতুর্থ স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতার সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেন। 

২৪-বছর বয়সে দ্বিতীয় উয়েফা সুপার কাপ, দ্বিতীয় ক্লাব বিশ্বকাপ ও কোপা দেল রে, পঞ্চম স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেন। ওই বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে ২০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়া মেসির অর্জনের ভান্ডারে যোগ হয় তৃতীয় বর্ষসেরা পুরস্কার ও দ্বিতীয় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট। 

২৫-বছর বয়সে লা লিগার ষষ্ঠ শিরোপা, বার্সেলোনার হয়ে ৩০০ গোল, চতুর্থ ব্যালন ডি’অর ও তৃতীয় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট  জেতেন। 

২৬-বছর বয়সে স্প্যানিশ সুপার কাপের ষষ্ঠ শিরোপা জিতেন এবং বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার চূড়ায় পৌঁছান। 

২৭-বছর বয়সে লা লিগার সপ্তম, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চতুর্থ এবং কোপা দেল রের চতুর্থ শিরোপার স্বাদ নেন। বার্সেলোনার হয়ে ৪০০ গোলের মাইলফলকেও পা রাখেন। 

২৮-বছরে লা লিগার অষ্টম, কোপা দেল রের চতুর্থ, উয়েফা সুপার কাপের তৃতীয় ও ক্লাব বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা জয়। আর্জেন্টিনার ইতিহাসের গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে উঠেন এবং জিতে নেন পঞ্চম বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। 

২৯- বছরে পঞ্চম কোপা দেল রে ও সপ্তম স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতেন। বার্সেলোনার হয়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার পাশাপাশি জিতে নেন চতুর্থ ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটবয়স যতই বেড়েছে মেসির অর্জনের পাল্লা ততোই ভারি হয়েছে। ক্লাব ক্যারিয়ারের এতশত অর্জনের মাঝে অক্ষেপ ছিল নীল-সাদা জার্সিতে একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের। ২০২১ সালে সে সাধের স্বপ্নও পূর্ণ হলো। আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন করে অর্জনের পাল্লা আরো ভারি করলেন। এরপরই একুশ সালের ইউরো এবং কোপা চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে অনুষ্ঠিত 'লা ফিনালিসিমা'র ট্রফিটাও ভাগিয়ে নিলেন আর্জেন্টিনার হয়ে। আক্ষেপ কেবল বিশ্বকাপ জয়ের।
 তবে মেসি পি এস জি যাওয়ার আগে বলেছেন, লা লিগায় রোনালদোর অনুপস্থিতি এবং তার বিপক্ষে খেলাটা তিনি বেশ অনুভব করেন।
'ক্রিস্টিয়ানোর অভাবটা আমি অনেক অনুভব করি। যদিও সে থাকতে লা লিগা জেতা বেশ কষ্টকর ছিল। লা লিগাকে সে অনন্য মহিমান্বিত করেছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য জুভেন্টাস বেশ যোগ্য একটি দল, আর ক্রিস্টিয়ানো যাওয়ার পর থেকে তারা আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষের ম্যাচটি তাদের আত্মবিশ্বাস শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।'
মেসি এবং রোনালদো নিঃসন্দেহে ফুটবলের ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় থাকবেন। কিন্তু মেসি মনে করেন, তার সতীর্থ সুয়ারেজও সেই তালিকায় থাকার যোগ্য।

Journalist Name : Avijit Das

Related News