Flash news
    No Flash News Today..!!
Saturday, May 11, 2024

২৬/১১ হামলার - ১৩ তম বর্ষপূর্তি, স্মরনে যোদ্ধারা

banner

#Prabhati Sangbad Digital desk:

২৬/১১ মুম্বাইতে সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। সেই হামলার ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। গোটা ভারতবর্ষের কাছে আজকের দিনটি খুবই যন্ত্রনার। ১৩ বছর আগে, সেই ভয়াবহ সন্ধ্যের কথা গোটা দেশবাসীর মনে এখনো দগদগে হয়ে আছে।


২০০৮ সালের এই দিনে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রাণকেন্দ্র মুম্বাই শহরের ১২টি স্থানে হামলা চালায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা লস্কর-ই-তৈয়বার ১০ জঙ্গি। আরব সাগর পেরিয়ে মুম্বইয়ে ঢুকে সশস্ত্র জঙ্গিরা প্রথমে  তাজ হোটেলে হামলা চালায়। তারপর একে একে সন্ত্রাসবাদীরা ছড়িয়ে পড়েছিল লিওপোল্ড কাফে, নরিম্যান হাইস, ছত্রপতি শিবাজী বাস টার্মিনাস, ট্রাইডেন্ট হোটেল, কামা হাসপাতালের মতো শহরের একাধিক জায়গায়। এরপর টানা চার দিনের সন্ত্রাসাবাদী আক্রম চলে সেখানে।


আক্রমনে ১৬৪জন মানুষ প্রান হারায়, এবং ৩ শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়, যাদের অনেকেই পরে মারা যায় অথবা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।  সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল মুম্বাইয়ের দি তাজমহল প্যালেস হোটেল এবং ওবেরাই ট্রাইডেন্ট হোটেলে হামলা। ৬৪ ঘণ্টার প্রচেষ্টায়,২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যেই মুম্বই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া অন্য সব আক্রান্ত স্থান সুরক্ষিত করে ফেলে। ২৯ নভেম্বর ভারতের জাতীয় রক্ষী বাহিনী (এনএসজি) তাজ হোটেলে আশ্রয়গ্রহণকারী অবশিষ্ট জঙ্গিদের হত্যা করে (এই অপারেশনটির নাম ছিল অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো) শহরকে জঙ্গিমুক্ত করে।


হামলার দিনে ২৬ নভেম্বর ২০০৮ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি ভারত সফরে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রণে। ওঠেন দিল্লির হায়দরাবাদ ভবনে। পরেরদিন চণ্ডীগড়ে মধ্যাহ্নভোজে তাদের একত্র হবার কথা ছিল। রাতে প্রণব মুখার্জী মুম্বাই হামলার খবর পেয়েই তার চণ্ডীগড় যাওয়া বাতিল করে দেন। তিনি কোরেশিকে নিজের দেশে ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিমান এসে কোরেশিকে নিয়ে যায়।


জীবিত অবস্থায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসাব জেরার মুখে স্বীকার করে, জঙ্গিরা ছিল পাকিস্তানি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। উক্ত সংগঠনটিকে ভারত, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ জঙ্গি-সংগঠনের তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। ভারত সরকার জানায়, হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল এবং তাদের নিয়ন্ত্রণও করা হয়েছিল পাকিস্তান থেকে।


 


২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিল কে সরিয়ে দেয়া হয়। সোনিয়া গান্ধী প্রণব মুখার্জীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে বলেন। শেষপর্যন্ত পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম দায়িত্ব নেন।


 


২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শেরি রহমান সরকারিভাবে স্বীকার করে নেন যে, আজমল কাসভ পাকিস্তানের নাগরিক।


 


২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানের আভ্যন্তরিণ বিষয় মন্ত্রী রহমান মালিক বলেন, হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল পাকিস্তানেই।২০১০ সালের ৬ মে, একটি বিশেষ আদালত পাঁচটি অপরাধের জন্য আজমল কাসভকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।


মুম্বাই হামলার পেছনের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই সবচেয়ে কম স্থান হয়েছে অর্থাৎ প্রাধান্য পায়নি। আর তা হলো, ভারত তথা ভারতে বসবাসরত নেটিভ জনগোষ্ঠীর প্রতি শত শত বছরের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশের মাত্রা।


১৩ বছর আগের সেই হামলায় শহিদদের স্মরণ করে এদিন শ্রদ্ধা জানানো হয় মুম্বইতে। মহারাষ্ট্রের গভর্নর ভগত সিংহ কোশিয়ারি, উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিলীপ ওয়ালসে পাতিল  সন্ত্রাসী হামলায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এদিন কু পোস্ট করেছেন পীযূষ গয়াল, স্মৃতি ইরানি সহ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পীযূষ গয়াল লিখেছেন, “দেশের প্রতিরক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা সব জওয়ান, পুলিশ এবং নাগরিকদের বিনম্রভাবে শ্রদ্ধা জানাই।''


এই মুম্বাইতেই ১৯৯৩ সালে, ঠিক বাবরি মসজিদসংক্রান্ত দাঙ্গার পর এক বিশাল সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ২৫৭ জন মানুষের সাথে সাথেই মৃত্যু হয়, এবং দেড় হাজার মানুষ আহত হয়।আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল, সেই হামলা ঘটে দাউদ ইব্রাহিমের সাহায্যে, এবং টাইগার মেনন এবং ইয়াকুব মেনন সেই হামলাটি সংগঠন করে।


যদিও ভারতের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে; কিন্তু সত্যি হলো, সব থেকে বেশি সংখ্যার হামলা করা হয়েছে মুসলিম চরমপন্থি বা জঙ্গিদের দ্বারা। আর এর প্রায় প্রত্যেকটি হামলার পেছনে রয়েছে প্রতিবেশি পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ হাত। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ চেয়েছিলেন ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্র, পক্ষান্তরে ভারত চেয়েছিল একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র তৈরি করতে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভ্রান্ত দ্বিজাতিতত্বের আস্ফালনে ভারতবর্ষের বিশাল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। 


পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সিদ্ধান্ত সর্বদাই নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী ও আইএসআই। আর এই ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রকাশ্যে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈশ-ই-মোহাম্মদ, হিজবুল মুজাহিদীন, আল-বদর এবং টিআরএফের মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোকে আজও তারা ব্যবহার করে চলেছে।

Journalist Name : Sayantika Biswas

Related News