সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা বিটকয়েন, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, ভারতে একটি আইনি মুদ্রা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো প্রস্তাব দেয়নি। শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে করা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সিতারামন এই জবাব দেন। ডিজিটাল লেনদেন বিষয়ে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে কারণ সরকার চলমান সংসদ অধিবেশন চলাকালীন প্রাইভেট ভার্চুয়াল কয়েন নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিল আনার পরিকল্পনা করছে।
ভারতে ক্রমবর্ধমান বিটকয়েন লেনদেন সম্পর্কে সরকার সচেতন কিনা জানতে চাইলে, অর্থ মন্ত্রক বলে যে সরকার এই ধরনের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে না। ফলে বিটকয়েনকে কারেন্সি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো প্রস্তাব সরকারের কাছে আছে কিনা তার জবাবে মন্ত্রণালয় পরিষ্কার উত্তর দিয়েছে, "না"। যা ইঙ্গিত দেয় যে সরকার তার বিলে ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। বিলের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করা হবে এমন একটি গুঞ্জন থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে বিশদ প্রকাশের আগে কোনও উপসংহারে আসা উচিত নয়।
তবে, নিষেধাজ্ঞার ভয়ে দেশের ক্রিপ্টোকারেন্সি ফার্ম এবং স্টার্টআপগুলি কোণঠাসা হয়েছে, পড়েছে ক্রিপ্টোর দামও। ভারতীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগকারীদের কার্যকলাপও গত কয়েকদিন ধরে কমেছে। বিলের প্রাথমিক বর্ণনা অনুসারে, এটির লক্ষ্য হল প্রাইভেট ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে "নিষিদ্ধ" করা এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা একটি ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তনের পথ প্রশস্ত করা। ডিজিটাল আকারে মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য 'ব্যাঙ্ক নোট'-এর সংজ্ঞার সুযোগ বাড়ানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৯৩৪-এর সংশোধনের জন্য সরকার অক্টোবরে 'RBI' থেকে একটি প্রস্তাবও পেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই মাসের শুরুতে একটি বৈঠক করেছিলেন যেখানে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা সদস্য জয়ন্ত সিনহার সভাপতিত্বে অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এই মাসে অন্যান্যদের মধ্যে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ, ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টো অ্যাসেট কাউন্সিলের (বিএসিসি) প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করে এবং একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করা উচিত নয় কিন্তু ব্যবসার স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত করা যেতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বারবার ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে তার দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি বারবার ব্যক্ত করেছে এবং বলেছে যে ডিজিটাল কারেন্সি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে এবং তাদের উপর লেনদেনকারী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা এবং তাদের দাবিকৃত বাজার মূল্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
আরবিআই বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রসারের মুখে একটি সরকারী ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে কাজ করে, যা লেনদেনের একটি বিকেন্দ্রীকৃত খাতা। এটি এক জায়গায় বা কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে রক্ষণাবেক্ষণ বা সংরক্ষণ করা হয় না। পরিবর্তে, এটি কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে, যা পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক নামেও পরিচিত। এই সিস্টেমটি ক্রিপ্টো কয়েন ব্যবহার করে করা লেনদেন প্রমাণ করতে ব্যবহৃত হয়। তবে যেহেতু সরকারের কাছে এই লেনদেনের কোনো তথ্য জানার অবকাশ নেই তাই ক্রিপ্টো জালিয়াতি ও বেআইনী নেশার দ্রব্য কেনা, ইত্যাদি ঘটনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না যা দেশের জনগণের নিরাপত্তার জন্য বিপদ সংকেত দিচ্ছে।