বাগুইআটি জোড়া খুন কান্ডে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত। শুক্রবার হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে বিধাননগর কমিশনারেটের হাতে গ্রেফতার হলো মাস্টারমাইন্ড সত্যেন্দ্র চৌধুরী। সূত্রের খবর ভিন রাজ্যে পালানোর ছক কষে ছিল সত্যেন্দ্র। সেখানেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। বিধাননগর পুলিশ স্টেশনে চলছে ম্যারাথন জেরা। গত ২২ শে অগাষ্ট থেকেই নিঁখোজ বাগুইআটির দুই দশম শ্রেণীর পড়ুয়া অতনু দে এবং তার পিসতুতো ভাই অভিষেক নস্কর। অপহরণ সন্দেহে বিধাননগর পুলিশ স্টেশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় পরিবারের তরফে। পরে মুক্তিপণ দাবি করে একাধিক ম্যেসেজ আসে অতনুর বাবার ফোনে। পরিবারের তরফে সেকথা বারংবার জানালেও পুলিশের পক্ষ থেকে মেলেনি কোনোরূপ সহযোগিতা। দিন কয়েক পর ৬ ই সেপ্টেম্বর বসিরহাট এবং হাওড়া থেকে উদ্ধার হয় দুই পড়ুয়ার পচা গলা দেহ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়তে হয় বিধাননগর পুলিশকে। মূখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সাসপেন্ড করা হয় বিধাননগর থানার আই.সি কে। তদন্তের দায়ভার তুলে দেওয়া হয় সি.আই.ডি-র হাতে। অভিযুক্ত সন্দেহে চারজন কে গ্রেফতার করে শুরু হয় জেরা। তারপর চারদিনের মাথায় অবশেষে গ্রেফতার হয় অতনু-অভিষেক খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র।অতনু-অভিষেক খুনে প্রথম গ্রেফতার হয় অভিজিৎ বসু নামক এক ব্যক্তি। জানা যায় তাকে জেরা করেই উঠে আসে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী-র নাম। তার খোঁজে শুরু হয় ফোন ট্র্যাকিং। পুলিশ সূত্রে খবর, ধরা পরার ভয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল এই সত্যেন্দ্র। প্রতি মূহুর্তে পরিবর্তিত হচ্ছিল টাওয়ার লোকেশন। শেষ পাওয়া টাওয়ার লোকেশন ছিল হুগলি-র। তারপর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এদিন হাওড়া স্টেশন চত্বরে পৌঁছায় বিধাননগর পুলিশের স্পেশাল টিম। সেখান থেকেই হাতে নাতে গ্রেফতার হয় সত্যেন্দ্র। সূত্রের খবর সত্যেন্দ্র ছিল নিহত পড়ুয়া অতনু-র প্রতিবেশী। পুরানো বাইক কেনা বেচার দালাল হিসাবেই পরিচিত এই সত্যেন্দ্র। পরিবার সূত্রে খবর অনলাইন গেম খেলে প্রায় ৫০,০০০ টাকা জমিয়েছিল অতনু। বাইক কেনার জন্য অতনু সেই টাকা তুলে দিয়েছিল প্রতিবেশী সত্যেন্দ্র-র হাতে। পরবর্তীতে বাইক এবং টাকা কিছুই না মেলায় সত্যেন্দ্রর বাড়িতে যায় অতনু এবং তার পিসতুতো ভাই অভিষেক। পরে একদিন বাইক দেওয়ার জন্য অতনু কে ডেকে পাঠায় সত্যেন্দ্র। সেইমতো অভিষেক কে সঙ্গে নিয়ে অতনু পৌঁছে যায় সত্যেন্দ্র-র কাছে। তারপর থেকেই নিঁখোজ ওই দশম শ্রেণীর দুই পড়ুয়া। পুলিশ সূত্রে খবর বেশ কয়েকদিন ধরে বিধাননগরের একটি হোটেলে ছিলো অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী। অন্যদের সাহায্যে সেখানেই খুনের ছক কষে সত্যেন্দ্র। গাড়ির মধ্যেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় অতনু-অভিষেক কে। কেবলমাত্র অতনুকে খুনের টার্গেট থাকলেও সেদিন অতনুর সঙ্গে তার পিসতুতো ভাই অভিষেক থাকায় খুন করা হয় দু'জন কেই। মূলত বাইক কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করেই এই জোড়া খুন বলে দাবি পুলিশের। পুলিশের গাফিলতিতেই চলে গেল তরতাজা দুটি প্রাণ, অভিযোগ পরিবারের। পাশাপাশি পরিবারের তরফে দোষিদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির দাবিও জানানো হয়েছে।