বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর অ্যামাজনের গভীর জঙ্গল থেকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার ৪ শিশু

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

গত ১ মে অ্যামাজনের গভীর জঙ্গলে বিমান দুর্ঘটনার ফলে তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। দুর্ঘটনাস্থল থেকে মৃত তিন জনের দেহ উদ্ধার করা হলেও সেই বিমানে থাকা চার শিশুকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে দুর্ঘটনার ৪০ দিন পরে শুক্রবার ৪ শিশুকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করল কলম্বিয়ার সেনা বাহিনীর জওয়ানরা। অ্যামাজনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনা হয়। বিমানে ৭ জনের মধ্যে তিন জনের মৃত্য হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের মা এবং বিমানের পাইলট। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় সেই মায়ের ৪ সন্তান। শিশুদের বয়স ১৩, ৯, ৪ বছর এবং তাদের সঙ্গে ছিল ১১ মাসের এক শিশু। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই তাদের উদ্ধার করে সামরিক বাহিনী। এই পরিবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের। শুক্রবার তাদের উদ্ধার হওয়ার খবর দেন কলম্বোর রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেট্রো।

ঘন জঙ্গলের মাঝে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মায়ের। ঘটনার পরই হারিয়ে গিয়েছে তাঁর চার সন্তান। দুর্ঘটনার ভয়ে জঙ্গলের ভিতর চলে গিয়েছে ৪ খুদে সাহায্যের খোঁজে। অ্যামাজনের জঙ্গলে রয়েছে জাগুয়ার, বিষধর সাপ এবং অন্যান্য হিংস্র প্রাণী। এত প্রতিকুলতার মাঝে তাদের কি আর কোনও দিন খুঁজে পাওয়া যাবে ? এমনই সব প্রশ্ন যখন ঘুরে বেরাচ্ছে সকলের মনে, ঠিক তখনই ৪০ দিনের মাথায় তাদের খুঁজে বার করে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে এল অপারেশন হোপ। 

বিমান দুর্ঘটনার জায়গা থেকে চার শিশু নিখোঁজ হওয়ার পরে সারা দেশে তাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এমনকী দেশের প্রেসিডেন্টও জানান, তিনি উদ্বিগ্ন।


বিশাল বড় তল্লাশি অভিযান শুরু করা হয় ওই চার অসহায় শিশুকে খুঁজে বার করতে। ১৬০ জন সেনা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৭০ জনকে নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি। উদ্ধারকার্যে মোতায়েন করা হয় বিমান এবং হেলিকপ্টার। অ্যামাজনের জঙ্গলে শুধু যে রয়েছে জাগুয়ার, বিষধর সাপ তা নয়। সঙ্গে রয়েছে মাদক চোরাচালানের দল। তাই উদ্ধারকাজ হয়ে ওঠে আরও কঠিন।

 এর মধ্যেই জঙ্গলে মারাত্মক গতিতে তল্লাশি চালাতে থাকে সেনাবাহিনী। তাদের উদ্যোগ যে ব্যর্থ হয়নি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল শুক্রবার। শেষ পর্যন্ত জঙ্গলেই পাওয়া গেল এই চার শিশুকে। তারা সকলেই সুরক্ষিত এবং নিরাপদ বলে জানা গিয়েছে। তল্লাশি চালানো সেনারা তাদের সঙ্গে ছবি দিয়েছেন। সেই ছবি আবার কলোম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন সুখবরটি। বলেছেন, সারা দেশ যাদের নিয়ে শঙ্কায় ছিল, সেই চার শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা নিরাপদ।

কিন্তু এই ৪০ দিন কী করে জঙ্গলে বেঁচে রইল তারা? এখনও তা নিয়ে সংশয় কাটছে না কারও। এই ক’দিনে তারা কী খেয়েছে, জল পেয়েছে কোথায়— এই সব বিষয় নিয়ে রয়েছে বিরাট সংশয়। শিশুদের শহরে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই জানা যাবে এই ৪০ দিনে ঠিক কী কী হয়েছে। 

তল্লাশি অভিযানে নিয়ে আসা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া কুকুর। শুরু হয় মা-হারা সন্তানদের খোঁজার কাজ। উদ্ধারদল নিশ্চিত ছিল যে ৪ জন জীবিত আছে। কিন্ত তারা চিন্তায় ছিল যে বাচ্ছারে ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করে চলছেন। তাই তাদের শক্ত থাকার বার্তা দিতে আকাশ থেকে ১০,০০০ টি লিফলেট নিক্ষেপ করা হয় জঙ্গলে। সেই কাগজে লেখা রয়েছে যে তারা যেখানেই আছে সেখানেই যেন থাকে। সঙ্গে দেওয়া survival tips। 

তল্লাশির সময় উদ্ধারদল খুঁজে পায় আধ-খাওয়া ফল এবং গাছ-পালা দিয়ে বানানো একটা সেল্টার। এগুলো থেকেই উদ্ধারকারীদল নিশ্চিত হয়ে যায় যে তারা জীবিত। এছাড়াও তাদের ঠাকুমার রেকর্ড করা কণ্ঠের বার্তা ব্রডকাস্ট করা হয় যাতে তারা স্থান পরিবর্তন কোনভাবেই না করে।

সেনার তরফে জানানো হয় দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিমি দূরে তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা ৪ শিশুকে কলম্বোর রাজধানী বোগোটাতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করছিল। বিমান অবতরন করতেই তাদের সেখান থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Journalist Name : প্রিয়শ্রী

Related News