ভারত
রাশিয়া বন্ধুত্ব অনেক দিনের, সেই স্নায়ু যুদ্ধের সময় থেকে। এত দীর্ঘ সময়
ধরে দুই দেশের এই বন্ধুত্ব স্বাভাবিক
ভাবেই বিশ্বের কাছে এক সফলতা।
সোমবার দিল্লিতে হওয়া মোদী পুটিন বৈঠকে আবারও তার প্রমাণ মিলল। ২০১৯ সালের পর অতিমারির
কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ভারত সফর। অতিমারি পরিস্থিতিতে টাল মাতাল গোটা বিশ্ব, রাশিয়ার অবস্থাও খুব একটা সুখকর ছিল না। অতিমারি পরিস্থিতি এখন কিছুটা হাতের মুঠোই, আর অতিমারি পরিস্থিতি
কিছুটা কমতেই ভারত সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন। ইতিমধ্যেই ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলির সাথে রাশিয়ার সংঘাত চরমে উঠেছে, তার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফর। সোমবার দুই রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়, বৈঠক শেষে স্বাক্ষরিত হয়েছে একাধিক চুক্তি, তার মধ্যে অন্যতম সামরিক চুক্তি। মোদী পুটিনের বৈঠক শেষে দুই দেশের মন্ত্রীদের মধ্যেও হয় বৈঠক। বৈঠকে
উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রী।
কাল
স্বাক্ষর হওয়া সামরিক চুক্তি অনুসারে আগামী ১০ বছর রাশিয়া
ভারতকে সামরিক প্রযুক্তি দেবে। জানা গিয়েছে ভারত এস৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে রাশিয়ার কাছে, যা চীনের বিরুদ্ধে
মোকাবিলা করতে ভারতকে সাহায্য করবে। যদিও গোটা বিষয়টি ঘটেছে আমেরিকার ক্যাটসা আইনকে বুড় আঙ্গুল দেখিয়ে। ক্যাটসা মূলত আমেরিকা প্রদত্ত এক আইন যাতে
বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছে কোন দেশ সামরিক সংক্রান্ত কোন উচ্চ প্রযুক্তি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র বা যুদ্ধের সরঞ্জাম
বেশি পরিমানে কিনতে পারবে না। ভারত এবং মস্কোর যৌথ উদ্যোগে কালশনিকভ একে ২০৩ রাইফেল বানানো হবে। উত্তরপ্রদেশের অমেঠিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি
টাকা খরচ করে গড়ে উঠবে রাইফেল ফ্যাক্টারি, যাতে কাজের সুযোগ পাবেন দেশের নাগরিকরা। বিশ্বের অস্ত্র ক্রেতাদের মধ্যে ভারতের নাম এখন অন্যতম। সামরিক চুক্তি ছাড়াও স্বাক্ষরিত হয়েছে বাণিজ্যিক চুক্তিতেও, যার মধ্যে আছে বিদ্যুৎ, জাহাজ তৈরির কারখানা, ইস্পাত, কয়লা প্রভৃতি।
বৈঠক
শেষে ভারত রাশিয়া পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে জানানো হয়েছে, “ আফগানিস্তানের ভুমি ব্যাবহার না করেই অন্য
দেশের সন্ত্রাস দমনমূলক কাজকর্ম চালানো হবে”। বৈঠক শেষে
ভারতের বিদেশ
সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, “ আই এস, আল
কায়দা, লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ভারত এবং রাশিয়া একসাথে কাজ করবে। ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলিতে যে জঙ্গি হামলা
বা সন্ত্রাসমূলক কাজ চলছে তা নিয়েও আজকের
বৈঠকে আলোচনা হয়েছে”। বৈঠক শেষে
রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বক্তব্য, “ আমরা যৌথ ভাবে সন্ত্রাস দমন, মাদক পাচার এবং অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হব এবং একসাথে
লড়ব। গ্লোবাল এজেন্ডা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই”। ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদী জানান, “ দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। গত কয়েক বছরে
বিশ্ব কূটনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ভারত রাশিয়া বন্ধুত্ব আরও বেড়েছে”।
এদিনের বৈঠকের পরে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং টুইট করে জানান, “ রাশিয়ার সাথে ভারতের মধুর কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, আজ বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে”। তবে সবকিছুই যে আমেরিকার চোখে ধুলো দিয়ে হয়েছে আমন টাও নয়। জানা গিয়েছে আমেরিকাকে জানিয়েই সমস্ত কিছু করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি কে২০৩ রাইফেল ভারতের হাতে এলে চীনের বিরুদ্ধে লড়তে সুবিধাই হবে।