শীতের সবজি ও ফুলের বাহার

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং অনুভব করেছিলেন ভারতবর্ষে কৃষিকাজের গুরুত্ব। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষির উন্নতি হলে দেশের উন্নতি হবে। শীতকাল এমন এক সময় যখন সারা পৃথিবী সম্ভবত ঘুমের ঘোরে প্রবেশ করে। ঠান্ডা বাতাস, শক্ত মাটি আর মৃতপ্রায় গাছ-গাছালিতে আচ্ছন্ন এই সময়ে যেন তেমন কিছুই করার থাকে না।কিন্তু ভারতবর্ষের মতো কৃষিপ্রধান দেশে শীতকাল শাকসবজি এবং ফুল চাষের জন্য একদম উপযোগী। বিশেষ করে গ্ৰামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই সময় ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বিন, পালংশাক সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া র মতো রকমারি ফুলের চাষ করা হয়। চাষিদের অর্থনীতি ত্বরান্বিত হয় শীতকালীন এই শাকসবজি এবং ফুল চাষের মাধ্যমে।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এই সময় শাকসবজি এবং ফুল চাষ করে ব্যবসা করা হয় যা দেশের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করে। এইরকমই একটি জায়গা হল পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত ক্ষীরাই। কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত ক্ষীরাই একটি স্বপ্নের গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি ছোট্ট স্টেশন। বিঘার পর বিঘা জুড়ে ছড়িয়ে নানা রঙের লক্ষ লক্ষ বাহারি ফুল।ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাই। পাশ দিয়ে বয়ে চলা ক্ষীরাই এবং কংসাবতী নদী এখানকার জমিকে অনেক উর্বর করে তুলেছে এবং ফুলচাষের অনুকূল আবহাওয়া প্রদান করেছে। কংসাবতী নদীর কারণে জলসেচের কোনো অসুবিধা হয় না। এই এলাকার পাশেই হাইওয়ে এবং রেল স্টেশন অবস্থিত। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা উৎপাদিত ফুলগুলিকে বাইরে ব্যবসার জন্য নিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু শীতকাল ছাড়া অন্য কোনো ঋতুতে চাষিরা অর্থ উপার্জন করতে পারেন না। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের উপদ্রব তো আছেই। তার সঙ্গে প্রচুর পর্যটকের আগমনে ফসলের ক্ষতি হয়েই থাকে। এছাড়াও নতুন একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিছু মানুষ ফুল বিদেশে পাচার করছে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা সত্বেও শীতকালে এখানে ফুলের ব্যবসা রমরমিয়ে চলে যা দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আমাদের দেশে কৃষিকাজ মানুষের প্রধান জীবিকা হলেও বিভিন্ন কারণে চাষিদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নানা প্রাকৃতিক সমস্যা দেখা যায়- জলবায়ুর পরিবর্তন, রোগের আবির্ভাব, কীটপতঙ্গের উপদ্রব এর অন্তর্গত। এছাড়া বাজারে পন্যের দামের ওঠানামা, রপ্তানির সমস্যা, অপর্যাপ্ত লাভ, পরিবহন ব্যবস্থার সমস্যা কৃষিকাজ থেকে অর্থ উপার্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কৃষকদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করা আর একটি সমস্যা। স্থানীয় এলাকায় ফুলের কোনো বাজার নেই। হাওড়ায় পাইকারি ফুলের বাজার,পাইকারি বিক্রেতারা চাষিদের সরাসরি ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে ফুল বিক্রি করতে দেয় না। কৃষকদের তাদের ফুল কম লাভে পাইকারিদের কাছে বিক্রি করতে হয়। পাইকারিরা তাদের ইচ্ছেমতো ফুলের দাম বাড়ায়, কমায়। উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেশ কিছু গবেষণামূলক বিষয় উপস্থাপন করেছে। কারণ, কৃষিকাজই মানুষের প্রধান জীবিকা। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের উন্নত যন্ত্রপাতি, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের কৃষক লোন প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের সাহায্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ ভারতের কৃষিকাজকে ত্বরান্বিত করেছে। কৃষিকাজ ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাই কৃষিকাজকে গুরুত্ব না দিলে এর ফলাফল ভবিষ্যতে ভারতের অর্থনীতিতে চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।

Journalist Name : Sampriti Gole

Tags:

Related News