ব্রেন স্ট্রোককে বাড়তে দেবেন না আর

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

ব্রেন স্ট্রোক একটি গুরুতর রোগ। এই অসুখে আক্রান্ত মানুষের প্রাণ সংশয়তা থাকে। তাই এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা জরুরি। এক্ষেত্রে কাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি, রোগের প্রাথমিক লক্ষণই বা কী, জেনে নেওয়া যাক। শরীরের কোথাও রক্ত চলাচল সম্ভব না হলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। মাথাতেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। তখন ব্রেনস্ট্রোক হয়। আসলে মাথার রক্তনালীতে কোনও কারণে রক্ত জমাট বাঁধলে, কোলেস্টেরল জমলে সেই অংশে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হয় না। তখন মস্তিষ্কের সেই অংশের কোষ মারা যেতে শুরু করে। এই কারণে তখন বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। এই অবস্থার নামই ব্রেন স্ট্রোক। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। কথা বলতে বলতে আচমকা জিভ অবশ হয়ে গেল, হাত তুলে বোঝানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন হাত তোলাও অসম্ভব। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার সব আগের মতোই। স্বাভাবিক। তাই সে যাত্রায় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা মাথাতেই এল না। রোজের ব্যস্ততায় ধীরে ধীরে থিতিয়ে যেতে শুরু করল এই ঘটনা। কয়েকমাস পরে এক বড়সড় স্ট্রোকের ধাক্কায় একেবারে যমে-মানুষে টানাটানি।
স্ট্রোকের সাধারণ কিছু লক্ষণ হল: 
 আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া।
 হাত ওপরে তুলতে না পারা।
 চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা।
কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া।
ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া।
জিহ্বা অসাড় হয়ে, মুখ বেঁকে যাওয়া।
শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে পড়ে যাওয়া।
হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা।
বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়া।
ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে তাঁর স্ট্রোক হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে কাছের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হবে। সম্ভব হলে মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান করে স্ট্রোকের ধরন বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক দুই ধরনের হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার জন্য অথবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য এবং যার চিকিৎসাপদ্ধতিও ভিন্নতর। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের একটি রোগ। বাস্তবে এটি মোটেই সত্য নয়। স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। এই দুর্ঘটনায় রক্তনালি বন্ধও হতে পারে, আবার ফেটেও যেতে পারে। এ কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ। স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে। প্রতি হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ করা গেলেও যে কোনো বয়সেই তা হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্ব্বিগুণ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। নারীদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার কিছুটা কম।

যেসব কারণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে—
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড়ো কারণ। রক্তচাপের রোগী যারা নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করে না বা কয়েক দিন খেয়ে প্রেশার কমে গেলে ওষুধ বন্ধ করে দেয় বা মনে করে উচ্চরক্তচাপে তার শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাই রক্তচাপের ওষুধ সেবন করে না।
অতিরিক্ত টেনশন, হূদেরাগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি বা অতিমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি।
অনিয়ন্ত্রিত অলস জীবন যাপন করা, বেশি বেশি চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া, স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ এবং অধিক পরিমাণে লবণ খাওয়া।
কিছু কিছু ওষুধ যা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যেমন অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ঘুমের সময় নাক ডাকা, ঘুমের সময় শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ।
অনেক সময় বংশানুক্রমে বা পূর্বের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও দূরবর্তী রক্তনালি বন্ধ হওয়ার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।
—যারা আগে থেকে বিভিন্ন রকমের হূদেরাগে ভোগে যেমন: ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, হার্টের ভাল্বে সমস্যা, অনিয়মিত হূত্স্পন্দন, ইতিপূর্বে মিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি।
স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ :
শরীরের কোথাও বা একাংশ অবশ ভাব লাগা কিংবা দুর্বল বোধ করা বা প্যারালাইসিস। পা, হাত, মুখ অথবা শরীরের ডান বা বাম অংশ অবশ হয়ে যাওয়া, পা দুটিতে দুর্বল বোধ করা চলাফেরা করতে না পারা, চলাফেরায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া।
কথা বলতে সমস্যা হওয়া, বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পতিত হওয়া, কথা জড়িয়ে আসা, অস্পষ্ট হওয়া এবং একেবারে কথা বলতে বা বুঝতে না পারা।
এক চোখ বা দুই চোখেই ক্ষণস্থায়ী ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি ঘোলা লাগা বা একেবারেই না দেখা। হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরা, হঠাত্ করে কিছুক্ষণের জন্য হতবিহবল হয়ে পড়া, বমি বমি বোধ অথবা বমি করা। স্ট্রোকের মারাত্মক উপসর্গ হচ্ছে অজ্ঞান হওয়া, খিঁচুনি, তিব্র মাথাব্যথা ও বমি।
স্ট্রোক হলে কী চিকিৎসা দিতে হবে :
আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। স্ট্রোক হয়ে গেলে চিকিত্সা অত্যন্ত জটিল।
রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিত্সা করা হয়। যদি খেতে না পারে, তবে নাকে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্রাব ও পায়খানা যাতে নিয়মিত হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার দিতে হবে। চোখ, মুখ ও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বেডসোর প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত পাশ ফেরাতে হবে।
উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি অনেক স্ট্রোক রোগীর হার্টের রোগ থাকে। এসব ক্ষেত্রে কারডিওলজিস্টের পরামর্শের প্রয়োজন হয়।
একজন স্ট্রোক রোগীর প্রয়োজন হয় নিউরোলজিস্ট ও নিউরোসার্জনের। অনেক স্ট্রোক রোগীর অপারেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট, বেডসোর প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং রেসপিরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট, প্লাস্টিক সার্জনসহ সবার সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগীর অঙ্গ সঞ্চালন করে জড়তা কাটিয়ে তুলতে রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপিস্ট প্রয়োজন হয়।
যেভাবে প্রতিরোধ সম্ভব:
স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ, চিকিৎসার চেয়ে এই রোগ প্রতিরোধই উত্তম। ব্রেনের কোষগুলো একবার নষ্ট হলে পুনরায় পুরোপুরিভাবে কার্যকর হয় না অথবা জন্মায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট ও জরুরি চিকিত্সা প্রয়োজন। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে ওজন কমানো, খাদ্যে পশুর চর্বি ও অধিক পরিমাণ লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ-রসগোল্লা, দুধ-ঘি-পোলাও-বিরিয়ানি, পাঙাশ-চিংড়ি-কাঁকড়া, গরু বা খাসির মাংস, নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত। 
রোগী কথা বলতে না পারলে প্রয়োজন স্পিচ থেরাপিস্টের।
স্ট্রোক কেয়ার ইউনিট, সমন্বিত স্ট্রোক কেয়ার টিমের ব্যবস্থাপনায় চিকিত্সায় আসবে সুফল, রোগী ও রোগীর স্বজন হবে চিন্তামুক্ত, রোগী লাভ করবে আরোগ্য।
#Source: online/Digital/Social Media News   # Representative Image



Journalist Name : Aparna Dutta

Related News