হাইকোর্টের নির্দেশে ১৮৩ জন অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই ১৮৩ জন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটার আগেই প্রকাশ্যে এল অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা।
২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষক। অভিযোগ, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সুপারিশের ভিত্তিতে যোগ্যদের সরিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে অযোগ্যদের। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা দায়ের হয়। এই মামলার অধীনেই নামপ্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অযোগ্য শিক্ষকদের নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিজেদের ওয়েবসাইটে (Website) বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন। বৃহস্পতিবার সন্ধের মধ্যেই ২০১৬-এর এসএসসি নবম ও দশমের ১৮৩ জনের নাম প্রকাশ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন ।এই তালিকায় যে ১৮৩ জনের নাম রয়েছে, তাঁরা ভুল পথে চাকরির সুপারিশপত্র পেয়েছিলেন।
যারা র্যাঙ্ক জাম্প করে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের কেবল নাম নয়, অ্যাপ্লিকেশন আইডি, রোল নম্বর, কোন বিষয়ে পেয়েছেন, কোন ক্যাটেগরির সব তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রতিটি বিষয়েই কিন্তু 'অযোগ্য প্রার্থীরা' চাকরি পেয়েছেন। কমিশনের প্রকাশিত তালিকা থেকে সেই তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। তালিকায় দেখা যায়, বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল, জীবন বিজ্ঞা, পদার্থ বিজ্ঞানের অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম রয়েছেন ওই তালিকায়।এমনকী, এই তালিকায় রয়েছেন এমন ৭৫-৮০ শতাংশ প্রার্থীরা বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে চাকরি করছেন।ভুয়ো সুপারিশপত্রে সবচেয়ে বেশি চাকরি পেয়েছেন ইংরেজি শিক্ষকেরা।
এর আগে সিবিআই দাবি করেছিল, তারা এমন প্রায় ৯৫২ জন সুপারিশপত্র প্রাপকের খোঁজ পেয়েছে। যার মধ্যে ৭৯৬ জন বর্তমানে শিক্ষক পদে কর্মরত। এই প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুক্রবারের মধ্যে যে ১৮৩ জন অবৈধ উপায়ে সুপারিশপত্র পেয়েছেন, তাঁদের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করতে হবে।তাঁদের মধ্যে কতজন, কোন স্কুলে কর্মরত, তাও জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে জানতে চাইবে কমিশন। ৩ দিনের মধ্যে স্কুল পরিদর্শকদের সেই তথ্য জানাতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। ফলে ক্রমশ অযোগ্যদের উপর চাপ বাড়তে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বরের এই ধরনের শিক্ষকদের বিস্তারিত রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিতে বলা হয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাই বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) কমিশনের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন, “আপনারা সাহসী হোন। এবার অনেক ধেড়ে ইঁদুর ধরা পড়বে।”
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে চর্চা। দুর্নীতির জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। তদন্তভার পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।এই মামলায় এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এসপি সিনহা, অশোক সাহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।