নয়া আইন! গর্ভধারণে সক্ষম মা বেছে নিতে পারবে না সারোগেসির পথ

banner

#PRAVATI SANGBAD DIGITAL DESK:

বর্তমান সময়ে আধুনিক সারোগেসি প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বহু নারী 'মা' হয়েছেন। সারোগেসি ব্যবস্থা তখনই একজন দম্পতি বেছে নেন যখন কোন স্ত্রী গর্ভধারণে অক্ষম, গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ অথবা যখন একজন অবিবাহিত পুরুষ বা নারী বা সমকামী দম্পতি সন্তান নিতে চান। পাশাপাশি এখন কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকাকালীন নারীরা গর্ভধারণের জন্য নিজের শরীরকে টানা ন'মাস ব্যস্ত রাখতে না চেয়ে 'সারোগেসি'কে বেছে নিয়েছেন। যেমন প্রীতি জিন্টা থেকে শুরু করে শিল্পা শেট্টি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, লিজ়া রে কিংবা সানি লিওনিও। 'সারোগেসি' হল একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতি। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ হতে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকাকালীন বহু তারকা গর্ভধারণের জন্য সারোগেসি কে বেছে নিয়েছেন। তাঁরা কেউই টোল পড়তে দেননি দৈহিক সৌন্দর্যে। বরং সারোগেসির আশ্রয় নিয়ে অন্য মায়ের গর্ভে জন্ম দিয়েছেন নিজের সন্তানকে। এবার এল সারোগেসি নিয়ে নয়া আইন। মা গর্ভধারণে সক্ষম থাকলে সারোগেসির পথ বেছে নিতে পারবে না। বাংলায় তা আর সম্ভব নয়। সারোগেসি নিয়ে নয়া কেন্দ্রীয় আইনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরও একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। সেই গাইডলাইনে বলা হয়, নিতান্তই শারীরিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা ছাড়া সারোগেসির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি নিঃসন্তান দম্পতির কাছে থাকতে হবে সারোগেসি বিষয়ক জেলাস্তরের মেডিক্যাল বোর্ডের শংসাপত্র। 

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও সংগীত শিল্পী নিক জোনাস দম্পতি সম্প্রতি সারোগেসির মাধ্যমেই কন্যা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন। শুধু তারাই নন বরং বলিউডের অনেকেই এই পদ্ধতিতে সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন। এমনকি সাধারণ অনেক দম্পত্তিও নিজস্ব কিছু কারণে বেছে নিচ্ছেন এই পদ্ধতি। তবে এবার থেকে আর শারীরিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া যাবে না। সারোগেসির নয়া নির্দেশিকায় এমনটাই বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তখনই কোনও মহিলা সারোগেসির আশ্রয় নিতে পারবেন, যদি তাঁর জরায়ু না থাকে বা জরায়ুতে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকে অথবা সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও বারবার গর্ভধারণে ব্যর্থ হন কিংবা কোনও অসুখের কারণে গর্ভধারণ করায় ঝুঁকি রয়েছে। 

তবে কখনোই লিভ টুগেদারের ক্ষেত্রে সারোগেসি পথ অবলম্বন করা যাবে না। এর জন্য হতে হবে একক মা বা সিঙ্গল মাদার, অথবা বিবাহিত যুগল। কোনও মহিলার যদি অন্য কোনও কারণেও গর্ভসঞ্চারের পর ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, তবে তিনিও সারোগেসির আশ্রয় নিতে পারবেন। সারোগেসি আইনের খসড়া বিলের অন্যতম প্রস্তাবক ও উপদেষ্টা, বিশিষ্ট বন্ধ্যত্বরোগ বিশেষজ্ঞ সুদর্শন ঘোষদস্তিদার জানান, "আমাদের রাজ্যে তেমন একটা অনিয়ম হয় না সারোগেসি নিয়ে। সেটা হয় মূলত গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে। তবে যত কমই হোক, নতুন এই গাইডলাইনে অনিয়ম কমবে বলে আমি আশাবাদী।" পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে সারোগেসির জন্য ইচ্ছুক দম্পতির বয়স হতে হবে স্বামীর ২৬-৫৫ বছরের মধ্যে ও স্ত্রীর ২৩-৫০ বছর। 

তবে ইচ্ছুক দম্পতির যদি কোনও জীবিত সন্তান থাকে, তা হলে সারোগেসি করা যাবে না। সাথে যাঁর গর্ভে ভ্রূণ বড় হবে, সেই সারোগেট মা-কে অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে এবং ন্যূনতম একটি জীবিত সন্তানের মা হতে হবে। ইচ্ছুক দম্পতি যে সারোগেট মায়ের তিন বছরের স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে হলফনামাও জমা দিতে হবে। স্টেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির কাছে  সকল নথি জমা পড়ার পরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে সারোগেট মাদার আগেও যদি একই কাজ করে থাকেন, তা হলে তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হবে না। সারোগেট মাদারকেও গর্ভধারণের জন্য মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেট জমা করতে হবে। 

উল্লেখ্য, আইভিএফ প্রযুক্তি সারোগেসির অন্যতম এক মাধ্যম। আইভিএফ হলো ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’। ডয়চে ভেলের এক স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে ইশা ভাটিয়া স্যানন ব্যাখ্যা করেন, নিষিক্তকরণের অর্থ হলো পুরুষের শুক্রাণু ও নারী ডিম্বাণুর মিলন। যেখান থেকে ভ্রূণ তৈরি হয়। ইন ভিট্রো অর্থ কাচের ভেতরে। এক্ষেত্রে বলা হয় টেস্টটিউব পদ্ধতি। এ কারণেই কৌশলটি টেস্টটিউব বেবি নামেও পরিচিত। এ পদ্ধতির মাধ্যমে নারীর শরীরের ভেতরে যে প্রক্রিয়াটি ঘটে, সেটিই টেস্টটিউবের মাধ্যমে ল্যাবে করা হয়। পুরুষের শুক্রাণু গ্রহণের পর নারীর শরীর থেকে ডিম্বাণু বের করে একটি সূচের মাধ্যমে শুক্রাণুতে প্রবেশ করানো হয়।

Journalist Name : Puja Adhikary

Related News