#PRAVATI SANGBAD DIGITAL DESK:
অমৃতলোকের পথে যাত্রা করলেন সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা ।বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। রবিবার রাত ১১টা ২৪ মিনিটে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ন্যাসিনী।
জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই বয়সজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন প্রবীণ সন্ন্যাসিনী।দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। ৭ ডিসেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়।সঙ্গে ছিল জ্বরও। আচমকা রবিবার দুপুরে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। বিকেলে ভেন্টিলেশন সার্পোটের প্রয়োজন হয় তাঁর। তবে আর বাঁচানো গেল না তাঁকে। রাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।১০২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা।
জানা গিয়েছে ,রবিবার রাতেই তাঁর পার্থিব দেহ দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতাল থেকে টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর ,আজ তাঁর দেহ দক্ষিনেশ্বর সারদা মঠে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টে অবধি শায়িত থাকবে। তারপর কাশিপুর মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে ,১৯২০ সালের অক্টোবরে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। পূর্বাশ্রমে নাম ছিল কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরানুরাগ ছিল প্রবল। যোগাযোগ ছিল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্গেও। সারদেশ্বরী আশ্রম ও হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি নার্সিং প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫০ সালে টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে ভক্তিপ্রাণা মাতাজিকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেন শ্রীরামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ শিষ্য তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষ স্বামী বিজ্ঞানানন্দ। ১৯৫৯ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দের কাছে সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেন। ওই বছরেই সারদা মঠ স্বতন্ত্র সঙ্ঘ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬০ সালে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্যও হন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। ১৯৬১ সালের ১৮ নভেম্বর রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে মাতৃভবনের দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয় রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে। তখন থেকেই প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতৃভবনের সম্পাদক হন। ১৯৯৮ সালে শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সহ অধ্যক্ষা নির্বাচিত হন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। ২০০৯ সালে সঙ্ঘের তৃতীয় অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণার মৃত্যুর পরে দায়িত্ব নেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজী। টানা ১৩ বছর তিনি এই দায়িত্বভার সামলেছেন।প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজী ছিলেন শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা। ২০০৯-র এপ্রিলে তিনি ওই পদে বৃত হন। তার আগে দীর্ঘ সময় তিনি টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ওই হাসপাতাল ১০ শয্যার প্রসূতি সদন থেকে ১০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত হয়। সেখানে সকলের কাছে তিনি ছিলেন 'বড় মা' নামে পরিচিত।
ভক্তিপ্রাণা মাতাজির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । শোকবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, ''শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। প্রবীণা মাতাজি সন্ন্যাসিনী সংঘকে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সংঘে ও বৃহৎ জনজীবনে গভীর আধ্যাত্মিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতার সৃষ্টি হল। এ ক্ষতি অপূরণীয়। শ্রী সারদা মঠের তথা রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সন্ন্যাসিনী ও ভক্তবৃন্দকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
Journalist Name : Susmita Das