কেন্দ্রের নোট বন্দির সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে সঠিক জানালা সুপ্রিম কোর্ট

banner

#Pravati Sangbad digital Desk:

নরেন্দ্র মোদীর সরকারের নোটবন্দি সিদ্ধান্তে সোমবার পেল ‘সুপ্রিম সিলমোহর’। শীর্ষ আদালতের ৫ বিচারপতির মধ্যে ৪:১ মতামতে নোটবন্দি বৈধ স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই বেঞ্চের যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের বিরুদ্ধমত পোষণ করেন, তিনি হলেন বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না। তাঁর মতে, নোটবন্দির নির্দেশিকা ‘বেআইনি’ এবং প্রক্রিয়াটি ‘অবৈধ’। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনেপ ২৬ (বি) ধারা উল্লেখ করেই তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেন মোদী সরকারের নোটবন্দির ঘটনা ‘বেআইনি’ ও ‘অবৈধ’ বলছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না। 

জানা গিয়েছে, এতদিন পর্যন্ত চলছিল শীর্ষ আদালতে শীতকালীন ছুটি। সেই ছুটি কাটিয়ে ২ রা জানুয়ারি কোর্ট খুলছে এবং প্রথম দিনই বিচারপতি বি আর গাভাই সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চের রায় প্রদান করবেন নোটবন্দি নিয়ে বলে জানা গিয়েছে। কার্যত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, ২০১৬ সালের নোটবন্দি করতে কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ১৯৩৪ ধারার ২৬ (২) এর অধীনে বিমুদ্রাকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল। এর ফলে ২০১৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ নোট বিনিময়ের অনুমতি দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পর পুরনো নোটের দখল এবং ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে এখনও প্রায় তিন ডজন পিটিশন জমা পড়েছে, যারা উল্লেখিত কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে পারেনি। সব মিলিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। কার্যত নোটবন্দি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

নোটবন্দির যথার্থতা নিয়ে বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না বলেন, “আমার মতে ৮ নভেম্বর নোটবন্দির বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া ছিল বেআইনি। কিন্তু, এখন আর ২০১৬ সালের সেই স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “নোটবন্দি ছিল ক্ষমতার প্রয়োগ, আইনের পরিপন্থী এবং সবমিলিয়ে বেআইনি। যথাযথ আইন মেনে নোটবন্দি কার্যকর করা হয়নি। যদিও নোটবন্দির ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ নিয়ে তাঁর কোনও প্রশ্ন নেই, কেবল ‘আইনত দিক থেকেই’ তিনি একথা বলছেন বলেও স্পষ্ট করে দেন বিচারপতি। “বিমুদ্রাকরণ যে মহৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা সন্দেহাতীত। ভাল উদ্যোগ এবং মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কেবল আইনি বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পরিমাপ করা হয়েছে, নোটবন্দির উদ্দেশ্য নিয়ে নয়।” তিনি এও উল্লেখ করেন, “এটি কালো টাকা, জঙ্গি তহবিল এবং জাল নোটচক্রকে নিশানা করেই করা হয়েছে।”

তবে নোটবন্দির বিরোধিতা করে আবেদনকারীদের যুক্তিকেও সমর্থন জানিয়েছেন বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না। তিনি বলেন, “আরবিআই আইন অনুযায়ী কেবল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বোর্ড নোট বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করা উচিত। কিন্তু, এক্ষেত্রে গত ৭ নভেম্বর কেন্দ্র আরবিআই-কে চিঠি দিয়ে নোটবন্দি করার প্রস্তাব জানিয়েছে।” পুরোনো উদাহরণ টেনে বিচারপতি আরও জানান, কেবল এক কার্যকরী বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারত। এ প্রসঙ্গেই বিচারপতি নাগরত্না বলেন, “কেন্দ্র ও আরবিআই-এর তরফে দেওয়া নথি ও রেকর্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে, যেন এটা (নোটবন্দি) কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে, আরবিআই-এর স্বাধীন মত ছিল না।”

নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে অন্তত ৫৮ টি পিটিশন দায়ের করা হয়। আর সেই পিটিশনের ভিত্তিতে দীর্ঘ শুনানি চলে। নোটবন্দি করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বলা হয়, সরকারের তরফ থেকে সঠিক পরিকল্পনা করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি পিটিশন জমা পড়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিকল্পিত নয় এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত। যদিও এখন আর সিদ্ধান্ত বদল করা সম্ভব নয় বলে দাবি জানায় সরকার। শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী জানায়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বদল করতে হলে সময়ের পিছনে হাঁটতে হবে। গত ৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে সেই মামলারই শুনানি হলেও রায়দান স্থগিত ছিল। অবশেষে এদিন সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় এল।

Journalist Name : Aparna Dutta

Related News