জোশীমঠে যে ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত আগেই পেয়েছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি এবং স্থানীয় জেলাশাসককেও। এক বার নয়, তিন বার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে চিঠির উত্তর দেওয়া দূরস্থান, প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়নি। আর জেলাশাসক চিঠি পেয়েও বুঝতে পারেননি কী উত্তর দেবেন।
এমন কিছু যে হতে চলেছে, গত কয়েক বছর আগেই তার আভাস মিলেছিল। গত অক্টোবর মাসে প্রবল বর্ষণের সময় থেকেই ঘরবাড়ি আর রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে থাকে জোশীমঠে।
এরই মধ্যে চর্চায় উঠে এসেছে এনটিপিসি হাইডেল প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের ঘটনা। এনডিটিভি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে এ বিষয়ে তিনবার চিঠি লিখেছিলেন জোশীমঠের বাসিন্দারা।
ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন কাছাকাছি নির্মীয়মান এনটিপিসি হাইডেল প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। সতর্কতামূলক সেই চিঠিগুলিতে বলা হয়েছিল, পবিত্র শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নির্মীয়মান প্রকল্পের বিস্ফোরণের কারণে মাটি কাঁপতে শুরু করে এবং বাড়ি এবং রাস্তাগুলিতে প্রাথমিক ফাটল দেখা দেয়। আতঙ্কিত বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জোশীমঠের একটি হোটেলের মালিক ঠাকুর সিংহ রানা জানান, ৭ কোটি টাকা দিয়ে হোটেল বানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হোটেলের নানা প্রান্তে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর এক বাসিন্দার কথায়, “সরকার যদি আমাদের কথা শুনে আগে থেকে কোনও পদক্ষেপ করত, তবে হয়তো এত বড় বিপর্যয় হত না।” চামোলির জেলাশাসক হিমাংশু খুরানা জানিয়েছেন, তিনি বাসিন্দাদের চিঠি পেলেও, তাঁর করণীয় কী, তিনি জানতেন না। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এনটিপিসি যাবতীয় সুরক্ষাবিধি মেনেই কাজ করছে। বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের চিঠি পেয়ে জেলাশাসক এক বার এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। কিন্তু এর বেশি কিছু হয়নি।
জোশীমঠের পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে, সেখানকার প্রায় ৬০০টি পরিবার প্রবল শীতেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে অল্প কয়েকটি পরিবারকেই পুনর্বাসন দেওয়া গিয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত পুনবার্সিত করছে সরকার। যে হারে শহরের বাড়ি, জমিতে ফাটল দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট জনপদটি থাকবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জোশীমঠ শহরটা ধীরে ধীরে বসে যাচ্ছে। এমনিতেই এই শহর তৈরি হয়েছে ধসে যাওয়া পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপের উপর। তাই এখানকার মাটি নড়বড়ে। তার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং যাবতীয় সতর্কতা উড়িয়ে গত কয়েক বছরে দেদার নির্মাণকাজ চলেছে জোশীমঠে।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও অবধি জোশীমঠের কমপক্ষে ৬০০ বাড়িতে ফাটল ধরেছে বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতিই বিশেষজ্ঞের একটি দল জোশীমঠে সমীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, এলাকাবাসীর দাবি সম্পূর্ণ সত্য, জোশীমঠের ভিত সত্যিই মাটিতে বসে যাচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তেই বড়ো কোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, বিপর্যয়ে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এবং খালি করতে হবে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আগামী ছ'মাস প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া পাবেন।