দীর্ঘদিন লকডাউনে গৃহবন্দী মানুষ। এই অবস্থায় বিপদের ঝুঁকি নিয়ে দূরে না যাওয়াই ভালো । এক্ষেত্রে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসা যেতেই পারে । এমনি ভাবা যেতে পারে ঝাড়গ্রামের কনকদুর্গা মন্দিরের কথা। ঝাড়গ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হাওড়া বা টাটা নগর থেকে এক্সপ্রেস বা লোকাল ট্রেনে করে যেতে লাগে ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিট। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা ৫০০ বছর আগে। মনে করা হয় সামন্তরাজ গোপীনাথ সিংহ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন প্রায় ৫০০ বছর আগে। এই মন্দিরে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে। এখানে মূর্তি অষ্টধাতুর। দেবী এখানে সিংহ বাহিনী নন; অশ্বারোহিনী। ডুংলি নদী কুলকুল করে বয়ে চলেছে তার তীরে গহন জঙ্গলে অবস্থিত এই মন্দির। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্থানে গেলে মন ভরে যায়। শীতকালে এই স্থান আরও সুন্দর করে তোলে পরিযায়ী পাখীরা। পরীযায়ী পাখির কলতানে ভরে ওঠে নীরব জঙ্গল। চিল্কিগড় রাজবাড়ির পাশেই অবস্থিত এই মন্দির। এই ঐতিহাসিক রাজবাড়িও পর্যটকদের মন করে আকর্ষণ। শোনা যায় এখানে আগে নরবলি হত। এখানকার মানুষ আজও বিশ্বাস করেন যে স্বয়ং দেবী দুর্গা এখানে নেমে আসেন মহাষ্টমীর রাত্রে ; নিভৃতে দেবী নিজহস্তে রান্না করেন অষ্টমীর ভোগ। এবার মন্দিরের কথায় আসা যাক। মন্দিরটি পূর্বমুখী, সামনে খীলানযুক্ত প্রবেশপথ। এগিয়ে গেলে দেখা যাবে পূর্বদিকে একটি বারান্দা আছে। মন্দিরের বাঁদিকে দেখা যাবে প্রাচীন বটগাছকে। যার নেমে আসা ঝুরিতে মানুষ বেঁধে যায় ইচ্ছাপূরণের ডুরি মানুষের বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে আছে এই গাছ। এখানে দেবীর ভোগের এক অদ্ভুত নিয়ম আছে। সেই নিয়মটি হল, সেখানে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয়; সঙ্গে দেওয়া হয় হাঁসের ডিম। মনে করা হয় দুর্গা রক্তমুখী; তাই এই হাঁসের ডিম দেওয়ার প্রথা। এই প্রথা অনেক বছরের পুরাতন। এখানে কালিকা পুরাণ মতে দেবীর পূজা হয়।এমনই লোকবিশ্বাস প্রাচীনতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কনক দূর্গা মন্দির। তাই এই মন্দিরে ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্য নিজেদের অর্থাৎ বঙ্গ লোকসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তাই একবার কনক দূর্গা মন্দিরে আমাদের যাওয়া অবশ্যই উচিত।