#Pravati Sangbad Digital Desk:
আমাদের দেশে পান একটি বহু পরিচিত খাবার। এক কথায় পানকে মুখশুদ্ধি হিসাবেও খাওয়া হয়। ঠাকুমা-দিদাদের আমল থেকেই এই পান খাওয়ার প্রতি একটা আলাদাই নেশা দেখা যেত। অনেকের কাছে পান খাওয়া একটি প্রতিদিনের অভ্যাসের মতো। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাণিজ্যকভাবে পান পাতার চাষ হয়। এই পান খাওয়ার মধ্যে বিভিন্ন উপকারিতা ও অপকারিতা দেখা যায়। আসুন বিস্তারিতাবে জেনে নেওয়া যাক যে স্বাস্থ্য সমস্যায় পান পাতার গুরুত্ব ঠিক কতখানি।
চিকিৎসক ও বৈজ্ঞানিকদের থেকে জানা গেছে, পান খেলে শরীরে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগকেও প্রতিহত করা সম্ভব। এমনকি একজন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক-যুবতীর স্বাস্থ্যপূর্ণ সুন্দরময় যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্যও পানের মহিমা অপরিসীম। সম্প্রতি গবেষণায় জানা গেছে, পানের মধ্যে যেসব সুপারি, চুন, জর্দা ব্যবহার করা হয়, তা শরীরের পক্ষে অনেকদিক থেকে যেমন অত্যন্ত উপকার করে তেমন আবার ক্ষতিও করে। চলুন, তাহলে পানের এই উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাক।
উপকারিতা:-
১) মুখশুদ্ধি :- পান খাওয়ার সময় পানের যে রস উৎপাদন হয় তা আমাদের মাড়ি ও দাঁতকে শক্ত রাখে এবং রোগ-জীবাণু হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এই রস মুখের ভিতরকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এমনি মুখের মধ্যে কোনোভাবে রক্তপাত ঘটলে তা বন্ধ হতে সাহায্য করে। পান পাতা বেটে তার রসটি গরম জলের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে উঠে গারগেল করলে তা গলার জন্য খুব উপকারী।
২) নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে:- অনেক সময়ই অতিরিক্ত পেট গরম হলে কিংবা সান স্ট্রোকের ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। তখন একটি পান পাতা নিয়ে নাকের মধ্যে গুঁজে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এটি করার সময় মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রাখতে হবে। আসলে পান পাতা খুব তাড়াতাড়িই রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে রক্তপাত বন্ধ করে।
৩) কানের ব্যথা করে:- পান পাতার সবচেয়ে বিশেষ সুবিধা হল এটি শ্রবণেন্দ্রিয়ের ব্যাথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কয়েক ফোঁটা পানের রসের সাথে অল্প করে নারকেল তেল মিশিয়ে কানে দিলে কানের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪) অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব:- কোনো জায়গায় কেটে গেলে বা ঘা জাতীয় কিছু হলে সেই স্থানে পান পাতা বেটে লাগালে সেই স্থানটি সুরক্ষিত থাকে। পান পাতা বাটা অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে ভালো কাজ করে। এছাড়াও যাদের আর্থারাইটিস রয়েছে সেই ব্যাথা কমাতেও পান পাতা বাটা সমানভাবে কাজ করে।
৫) প্রসাবের সমস্যায় সাহায্য করে :- বিশেষত যাদের কিডনির রোগের সমস্যা রয়েছে, যাদের প্রসাবের সময় সমস্যা হয়, সেই সমস্যা দূর করতে পান পাতা বিশেষভাবে কাজ করে। পান পাতা শরীর থেকে দ্রুত জল বের করে দিতে পারে। দুধের সাথে মিশিয়ে পান বাটা খেলে প্রসাবের সমস্যা নিরাময় হয়।
এছাড়াও পান খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হজম শক্তির বৃদ্ধি ঘটে, হৃদস্পন্দনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, গলার আওয়াজ পরিস্কার করতে সাহায্য করে, পানের সাথে লবঙ্গ এফং গোলমরিচ প্রতিনিয়ত মিশিয়ে খেলে কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে শুধু পান খেলে মানুষ উপকৃতই হয় এমন নয়, বরং অতিরিক্ত পান খেলে মানব শরীরের অনেক ক্ষতিও হয়ে থাকে। পান খাওয়ার অপকারিতাগুলি হল –
১) খালি পেটে পান খেলে তা শরীরের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর।
২) পান পাতায় বেশি চুন দিলে তা দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে।
৩) পানের সহিত জর্দা মেশালে পানের সমস্ত গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
৪) অতিরিক্ত পান খেলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয়।
৫) পানের সাথে বেশি সুপারি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর।
৬) পানের সঙ্গে অতিরিক্ত খয়ের মিশিয়ে খেলে ফুসফুসে ইনফেকশন হয়ে থাকে।
৭) অতিরিক্ত পান খেলে ভীষণ জ্বর হয়।
৮) পান পাতা খুবই উষ্ণ এবং পিত্তকারক, তাই গর্ভবতী মহিলাদের পান খাওয়ার একদমই উচিত না।
Journalist Name : Sutapa Dey Sarkar