বিশ্ব ডিজিটালাইজেশন এর সাথে সাথে বাড়ছে চাহিদা। সেই সাথে পুরনো ধ্যান ধারণা পাল্টে দিয়ে বদলাচ্ছে চাহিদার ধরনও। ফলে মানুষ চাইছে তার ইনকাম বাড়াতে এবং আধুনিক কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে। আর সেই সাথে প্রয়োজন পড়ছে অর্থ পরিচালনার সুষ্ঠু অভ্যাস গঠনের। কিন্তু সেই অভ্যাস হঠাৎ করে আসে না। যেকোনো অভ্যাস গড়তে বেশ সময় লাগে। বলতে গেলে, ছোট থেকে তৈরি অভ্যাস সারাজীবন মনে থাকে। তাই এক্ষেত্রেও অর্থ পরিচালনার অভ্যাস ছোট থেকে তৈরি করা উচিত। স্কুল গুলিতে বিভিন্ন ধরনের পাঠ দিলেও অর্থ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয় না। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ত্ব পরে অভিভাবক দের উপর। বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাই অনেক মা বাবাই ছোটদের অর্থের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন। বাচ্চাদের চাহিদা সঙ্গে সঙ্গে পূরণ না করে তাদের উৎসাহিত করছেন সঞ্চয় করে তা নিজে কিনতে। ছোটরা আসলে দেখে শেখে। তাই অভিভাবক যখন মানি ম্যানেজমেন্ট করার সময় ছোটদের সামনে রাখে তারাও তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে।
সহজ কথায়, মানি ম্যানেজমেন্ট হল কীভাবে উপার্জন করা, খরচ করা,
সঞ্চয় করা, ধার করা এবং দায়িত্বের সাথে অর্থ পরিশোধ করা শেখা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া
যা একজন ব্যক্তিকে অর্থ সম্পর্কে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নিতে এবং ভবিষ্যতে তার লক্ষ্য
অর্জনে সহায়তা করে।
সন্তানকে আর্থিক ব্যবস্থাপনার কৌশল বা দক্ষতা শেখানোর অন্যতম সেরা উপায় হল অর্থের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবের মডেলিং করা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন ভাল খরচ এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস প্রদর্শন করেন, তখন সেগুলি আপনার সন্তানের উপরও প্রভাব তৈরি করে। সুতরাং, উদাহরণস্বরূপ, আপনি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ পাঠ প্রদানের জন্য পরিস্থিতি বাছাই করতে পারেন। যেমন, আপনি যখন মাসিক বাজেট তৈরি করছেন তখন তাদের সাহায্য নিন, বা জরুরী অবস্থার জন্য কীভাবে অর্থ আলাদা করতে হবে বা সঞ্চয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন তা বলুন। সর্বোপরি, আপনার বাচ্চাকে পরিবারের অর্থের সাথে জড়িত করা তাদের অর্থ পরিচালনার বিষয়ে বোঝার জন্য সাহায্য করার একটি ভাল উপায়।
বাচ্চার সাথে অর্থ ব্যবহার করার বিষয়ে কিছু স্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করতে পারেন – উদাহরণস্বরূপ বলা যায় খরচ, সঞ্চয় এবং অনুদানে কতটা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করুন। এটি তাদের আজীবন অর্থ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং পাঠ শিখতে সাহায্য করবে। সাথে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে তাদের পয়েন্ট দিন এবং সব পয়েন্ট যোগ করে একটি নির্ধারিত মূল্য দিন যা দিয়ে সে পছন্দের কিছু কিনতে সাহায্য করে। এই পয়েন্ট নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখতে, গাছে জল দিতে বা বাড়ির পোষ্য প্রাণীটির দেখভাল করার জন্য দিতে পারেন। এতে বাচ্চার এক ভালো অভ্যাস তৈরি হবে সাথে কিছু কিনতে হলে তা উপার্জন করতে হয় সেই ধারণা আসবে।
আবার শুধু কেনার জন্য নয়, অর্থ সংরক্ষণ যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
তা বাচ্চাকে বোঝানোর জন্য অর্থ সঞ্চয় করার জন্য গাইড করতে হবে। সব খরচ করার পরিবর্তে
সর্বদা তাদের ভবিষ্যত বা যেকোন জরুরী অবস্থার জন্য তাদের পকেটের অর্থ সঞ্চয় করতে উত্সাহিত
করা দরকার।
বড় হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চারা যে জিনিস কিনতে চায় তার জন্য সঞ্চয় করার কথাও ভাবতে শুরু করে। এটি তখনই সম্ভব যখন অভিভাবকেরা তাদের স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করেন। এগুলো মূলত আর্থিক অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। এতে তারা চাওয়া এবং চাহিদার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখবে, অবশেষে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের জন্য সঞ্চয় করতে চালিত করবে।
আজকের শিশু এবং কিশোররা এমন একটি বিশ্বে বেড়ে উঠছে যা তাৎক্ষণিকভাবে
ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত। ফলস্বরূপ, শুধুমাত্র নগদ অর্থ বা কয়েনের পরিবর্তে
বিপুল সংখ্যক ডিজিটাল লেনদেন হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের ডিজিটাল অর্থ বা
অনলাইন লেনদেন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার
করে কীভাবে অর্থ ব্যয়, সঞ্চয় বা স্থানান্তর করা যায় সে সম্পর্কেও তাদের সচেতন হতে
হবে। সবশেষে, এটা অপরিহার্য যে বাচ্চা এবং কিশোররা তাদের খরচ, সঞ্চয় এবং দান সহ তাদের
পকেট মানি এর ট্র্যাক রাখা শেখে।