শীতের মরসুম পড়তে না পড়তেই মনটা কেমন যেন ঘুরু ঘুরু করতে চায়। তাই নয় কি? কারুর কাছে সেটা চড়ুইভাতি, আবার কেউবা বলে বনভোজন, আবার কেউ পিকনিক বলে, সে যাই হোক না শীতকাল আসছে আর ঘুরতে যাওয়া হবে না সেটা আবার হয় নাকি? শীতের মরসুম দরজায় কড়া নাড়া শুরু করেছে কিনা সাথে সাথেই শুরু হয় যায় তোড়জোড়। কোথায় যাওয়া হবে? কি কি খাওয়ারের মেনু হবে? মেনুতে কিছু থাকুক চাই না থাকুক, কচি পাঁঠার ঝোল, নলেনগুড়ের সন্দেশ বা রসগোল্লা থাকলে মন্দ হয় না বৈকি, কমলালেবু আর জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া, উউউফফ ব্যাপারটা পুরো জমে যাবে, আর সাথে খেলার সাথী ব্যাডমিন্টন রেকেট নেওয়াটা কিন্তু অত্যন্ত আবশ্যক। তারপর শুধু একটা দিন ঠিক করে সকাল সকাল সদলবলে হুস করে বেরিয়ে পড়া। উফফ!সেকি মজার ব্যাপার তাই না?
রোজকার ব্যস্ততা একঘেয়েমি জীবন কাটিয়ে,শহরের কোলাহল ছেড়ে বেশ আনন্দে হইচই করতে করতে বেরিয়ে মানুষ যেন নিজেকে বেশ নতুন করে আবার খুঁজে পায়। পরিবারের সাথে, আত্মীয়-বন্ধুর সাথে বেশ নিজের মনের মতো কিছু সময় কাটাবার সুযোগ পায়। উলের জামাকাপড়, খাওয়া
– দাওয়া, ঘুরতে
যাওয়া, সবকিছু
মিলিয়ে কিন্তু বেশ একটা মজার ব্যাপার তৈরি হয়। আর আমরা কি করে সেই মজার থেকে বঞ্চিত হই? আর
কেনই বা হবো বঞ্চিত? কারোই
বা ভালো লাগে একঘেয়েমি জীবন ব্যস্ততার জীবন, তাই
সুযোগ পেলেই ইচ্ছে করে কাছেপিঠে যদি টুক করে একটু ঘুরে আসার।
তো আজ তাহলে কয়েকটা জায়গা ঘুরে আসা যাক, দেখে
নেওয়া যাক পিকনিকের জন্য কোন কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যাবে :-
১. ডায়মন্ড
হারবার :-
কলকাতার কাছেই খুব সুন্দর
ডায়মন্ড হারবার। পবিত্র গঙ্গা যখন সমুদ্রের সাথে মিশে একটি সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে, সেটাই
তখন ডায়মন্ড হারবারকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। তার রূপ যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গঙ্গা নদী এখান থেকেই দক্ষিণে মোড় নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। নদীর পূর্ব পাড়ে ছোট্ট শহর এই ডায়মন্ড হারবার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জায়গাটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ – ৫৮
কিলোমিটার দূরত্ব।
কয়েকশো বছর আগে এই জায়গার নাম ছিল ‘হাজিপুর’। হজযাত্রীদের জাহাজ এখানে নোঙর করা হত। এক সময়ে পর্তুগিজদের ঘাঁটি ছিল এখানে। পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়। কালক্রমে জায়গার নাম পাল্টে ডায়মন্ড হারবার হয়ে যায়। নদীর ধারে ব্রিটিশরা গড়ে তুলেছিলেন বিশাল দুর্গ। কেল্লার নিরাপত্তার জন্য কামান রাখা হয়েছিল। ছিল বিশাল লাইট হাউজ, ওয়াচ
টাওয়ার। চিংড়িখালি দুর্গ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এটি। স্থানীয় মানুষেরা এটিকে ‘পুরাতন
কেল্লা’ বলেই
ডাকেন। কারো কারো মতে, এই
দুর্গ ব্রিটিশরা নয়, পর্তুগিজরা
তৈরি করেছিলেন। যাই হোক, এখন
কেল্লার কোনো অস্তিত্ব নই। রয়ে গেছে কিছু
স্মৃতি এবং নস্টাহলজিয়া। বর্ষাকালে ডায়মন্ড হারবারের রূপ আরো বেশি আকর্ষণীয় হয় ওঠে। এখানে এসে টাটকা তাজা ইলিশ মাছ খাওয়ার মজাই আলাদা। পর্যটকগণ এখানে নিজেদের ছুটি কাটাতে,নির্ভাবনায় আস্তে পারেন, এবং পিকনিক-স্পট হিসেবে ডায়মন্ড হারবারের যথেষ্ট সুনাম আছে।
কি ভাবে যাবেন :-
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দক্ষিণ শাখার ট্রেন ধরে ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে নামতে হবে। দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। সড়কপথে কলকাতা থেকে ঘণ্টা দুয়েক ড্রাইফ করে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে এই ছোট্ট শহরে চলে যেতে পারেন। এসপ্ল্যানেড থেকে ডায়মন্ড হারবার যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন :-
ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে ভ্রমণ সেরে একদিনেই ফিরে আসা যায়। তবে ইচ্ছে করলে আপনি সেখানে কয়েকদিন থাকতেও পারেন। ডায়মন্ড হারবারে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের সাগরিকা ট্যুরিজম প্রপার্টি। সেখানেই মনের আনন্দে কিছুদিন বন্ধু-বান্ধব-পরিবারকে নিয়ে কাটাতে পারেন।
২. গাদিয়ারা
ও গেওখালী :-
সব ক্লান্তি, ব্যস্থতাকে
পিছনে ফেলে ঘুরে আসাই যায় গাদিয়ারা থেকে। গাদিয়ারা আর গেওখালীর মধ্যে কেবলমাত্র একটি নদীর ব্যবধান। কলকাতার কাছেই হাওড়া জেলায় হুগলি নদীর তীরে বেড়ানোর মনোরম জায়গা গাদিয়াড়া। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮০ - ৯০
কিলোমিটার। এখানে জলরাশি অফুরন্ত ও চওড়া। নদীর ধার ধরে অনেক গাছের ছায়ায় বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকা। এখানেই দামোদর মিশেছে হুগলিতে। সেই হুগলিতে নৌকা নিয়ে নদীভ্রমণে যেতে পারেন।
কি ভাবে যাবেন :-
গাদিয়াড়া ও গেঁওখালি যাওয়ার অনেক ব্যবস্থা আছে। হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান। সেখান থেকে বাসে গাদিয়াড়া যেতে পারেন। অথবা নিজস্ব গাড়ি থাকলে বা বাসেও সরাসরি আসা যায় গাদিয়াড়া। যারা ভাবছেন কলকাতা থেকে যাবেন তাঁরা কলকাতা থেকে বাসে করে বা গাড়িতে চলে আসুন নুরপুর সেখান থেকে নদী পথে লঞ্চ চেপে ঘুরতে পারেন গাদিয়াড়া এবং গেঁওখালি। একদিনের সারদিনের ভ্রমণের জন্য সাজিয়ে নিতে পারেন। প্রথমে হাওড়া, গেঁওখালি,
নুরপুর, গাদিয়াড়া
হয়ে পুনরায় হাওড়া চলে আসুন।
কোথায় থাকবেন :-
একদিনের ভ্রমণের হিসাবে ঘুরতে পারেন কিংবা যদি ভাবেন একদিন দু’দিন কাটাবেন, তাহলে তারও ব্যবস্থা আছে। গাদিয়াড়ায় নদীর পাড়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের নিজস্ব লজ আছে। নাম রূপনারায়ণ লজ। এছাড়াও অনেক বেসকারি হোটেল ও লজের ব্যবস্থা আছে। গেঁওখালিতে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ত্রিবেণী সঙ্গমে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স ও সেচ দফতরের বাংলো আছে।
৩. টাকি
:-
টাকি একটি ছোট্ট শহর উত্তর চব্বিশ পরগনাতে, হাসনাবাদ
পুলিশ স্টেশনের বসিরহাট সাব ডিভিশন, ইছামতি
নদীর তীরে অবস্থিত।সপ্তাহের শেষে ছুটি কাটানোর জন্য একটি সুন্দর জায়গা কলকাতার কাছাকাছি
হলো টাকি।
যদি আপনি এমন কোন জায়গা খুঁজছেন যেখানে সম্ভবত বিশেষ কেউ যায়না বা বিশেষ কেউ চেনেনা এবং নিরিবিলিতে আপনারা একান্ত একটু সময় কাটাতে চান তবে তাকি সব থেকে বিশেষ জায়গা হবে আপনার জন্য।
টাকি অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশ বর্ডারে ইছামতি নদীর তীরে। এই জায়গাটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে পড়ে। টাকির দূরত্ব কলকাতা থেকে ৭৫ কিলোমিটার।
কি ভাবে যাবেন :-
আপনি যদি আপনার যাত্রা দক্ষিণ কলকাতা বা মধ্য কলকাতা থেকে শুরু করেন তাহলে আপনি কলকাতা মালঞ্চ রোড টি নিতে পারেন সাইনসিটি থেকে এবং তারপর নিতে পারেন মালঞ্চ বসিরহাট হাইওয়ে।
তাকি পৌঁছানোর আরেকটি রুট হচ্ছে বারাসাত চাপাডালি হয়ে। আপনি বারাসাত থেকে টাকি রোড ধরতে পারেন পারবেন এবং টাকি পৌঁছতে পারবেন বেরাচাম্পা এবং বসিরহাট হয়ে।
আপনি যদি টাকি যেতে চান ট্রেনে তাহলে আপনাকে শিয়ালদা রেলওয়ে স্টেশন থেকে হাসনাবাদ লোকাল ট্রেন ধরতে হবে এবং আপনাকে টাকি রেলওয়ে ষ্টেশনে নেমে যেতে হবে। আপনি সেখান থেকে টোটো নিয়ে হোটেলে পৌঁছাতে পারেন।
টাকি যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকে প্রচুর বাস পাওয়া যায়। আপনি যে কোন একটা বাস নেবেন যেটি এসপ্ল্যানেড বা শ্যামবাজার থেকে বারাসাত হয়ে যায়।বাসের 2-3 ঘন্টা লাগতে পারে।
কোথায় থাকবেন :-
আপনি টাকিতে গেলে সেখানে অনেক গেস্ট হাউজ এবং হোটেলে থাকতে পারেন এবং রাত কাটাতে পারেন ইছামতি নদীর তীরে হোটেলগুলোতে। আপনি হোটেলের ব্যালকনিতে বসে কাটিয়ে দিতে পারেন বিকেলটি এবং ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করতে পারেন।
MakeMyTrip এবং Yatra এসব ওয়েবসাইটে টাকির হোটেল বুকিং হয়।এছাড়া অন্যান্য গেস্ট হাউস আছে যেমন নৃপেন্দ্র অতিথিশালা যা টাকির মুনিসিপাল গেস্ট হাউস নামে জানা গেছে।
ওপরে দেওয়া কয়েকটি জায়গায় পর্যটকদের ছুটি খুবই আনন্দময় করে তুলবে। কয়েকটি দিনের জন্য বেরিয়ে আসাই যায়। শীতকাল হোক বা কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেই হোক ঘুরেই আসে দেখুন মন বার বার চাইবে আবার ফিরে যেতে সেই সব জায়গাতে।