রোজকার জীবনের অনেক সমস্যার সন্মুখীন হতে হয় আমাদের। এই যেমন ধরুন: - রান্না করছেন অথচ ভুল করে অনমনস্ক হয়ে পরিমান মতো নুন বা হলুদ দেওয়ার বদলে দিয়ে দিলেন একগাদা নুন বা হলুদ, আর খেতে যখন বসলেন সেই খাওয়ার খেতে গিয়ে দেখলেন, এই তরকারি কি সেই তরকারি যা আপনি নিজেই রান্না করেছেন? আজ্ঞে! হ্যাঁ, এটাই সেই তরকারি। আবার কখনো এমন হয়েছে যে অসহ্য গরমে ঘামে ভিজে বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ আসছে আপনার গা থেকে, কিন্তু এই দিকে আবার ঘরে ডিও, পারফিউম, কিছুই নেই। যা তাহলে কি হবে? এই দুর্গন্ধ নিয়ে তো আর বাইরে যাওয়া যায় না বা এই দুর্গন্ধ তো আর শরীরে থাকতে দেওয়া যায় না। এই সব শুনে ভাবছেন তো, “আরে এ তো প্রায়সই হয় আমার সাথে।“ কিন্তু মুক্তির উপায় কি? ওই নুনে পোড়া খাওয়ার বা ওই হলুদে পোড়া খাওয়ার তো আর খাওয়া যায় না। তাই আজ আপনাদের জন্যই কলকাতা শহরের একজন মধ্যবিত্ত ঘরের গৃহবধূ মিসেস অর্চনা লাহিড়ী। নিয়মিত ঘরোয়া সমস্যার কিছু টিপস দিলেন, যা আপনাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
“নমস্কার, মিসেস লাহিড়ী। কেমন আছেন?” “আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?” “আমি ভালো আছি। আচ্ছা, মিসেস লাহিড়ী আমাদের এই রোজকার জীবনে এমন অনেক সমস্যা আছে যার সমাধান বের করতে গিয়ে আমাদের অনেককেই প্রায় হিমশিম খেয়ে যেতে হয়। আপনি তো নিজে একজন গৃহবধূ তো আপনিও নিশ্চই এই রোজকার জীবনে অনেক ঘরোয়া সমস্যার সম্মুখীন।” “সে আর বলতে, উফফ সেই সমস্যা নিয়ে তো একেবারে ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল, পরে অবশ্য আমার শাশুড়ি মায়ের থেকে অনেক ঘরোয়া টোটকা আমাকে এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়েছে।”
“আচ্ছা, মিসেস লাহিড়ী, আপনি এই বললেন যে এই ঘরোয়া সমস্যা নিয়ে আপনার নাকি এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেটা একটু যদি বলেন আমাদের।” “আমি তখন বিয়ে করে নতুন এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি, তখন তো কিছুই করতে পারতাম না ঠিক মতো। বৌভাতের দিন রান্না করতে নতুন বউকে, আমি তো সেই কোনোরকমে রান্নাঘরে গেছি। আমাদের যিনি কাজের দিদি রিঙ্কু দি। ও গ্যাস অন করে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি কি রান্না করবো? আমি সহজ রান্না পায়েস বানাবো বললাম। রিঙ্কু দি দুধের বড় ডেচকিটা গ্যাসে বসিয়ে আমাকে সব জিনিস বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। এই দিকে দুধ ফুটতে দেরি হচ্ছে বলে আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে নিজের ফোনে দেখছিলাম, কখন যে দুধ উথলে চারিদিকে পড়ে একেবারে বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার হলো। আর সাথে দুধের ডেচকির গায়ে পোড়া দুধ লেগে গিয়ে একাকার হয়ে গেলো। সেই সময় আমার শাশুরি মাকে বলতে শুনেছিলাম ভিনিগার মাখিয়ে রাখলে বাসনের গায়ে থাকা পড়া দাগ নাকি খুব সহজেই ওঠানো যায়।”
“বাহ,এটা তো খুব সহজ উপায়। এখন থেকে রান্না করতে গিয়ে যদি বাসন পুড়েও যায়, আর কোনো চিন্তা থাকবে না, ভিনিগার তো আমাদের সকলের বাড়িতেই কম বেশি থেকেই, আবার শুধু পোড়া বাসনের গায়ে মাখিয়ে নিলেই জাদু হয়ে যাবে। আচ্ছা, মিসেস লাহিড়ী, এই পোড়া দুধের দাগ ওঠানোর মতো কি আর অন্য সমস্যার সমাধান আছে নাকি আপনার কাছে?” “হ্যাঁ, হ্যাঁ একদম এরকম অনেক ঘরোয়া সমস্যার সমাধান আছে বৈকি।” “আরো কি কি সমাধান আছে একটু যদি বলেন মিসেস লাহিড়ী...” “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।”
১) গরম পোশাক বা সিল্কের পোশাক ধোওয়ার পর যদি ইউক্যালিপটাস তেল মেশানো জলে ডুবিয়ে নেন তাহলে আর পোকামাকর কেটে দেওয়ার ভয় থাকবে না, আর পোশাকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
২) উলের পোশাক ধোওয়ার পর এক বালতি জলে আধ চামচ গ্লিসারিন দিয়ে তাতে ডুবিয়ে নিন, তাতে পোষাকের নরম ভাব বজায় থাকবে।
৩) এই ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের মধ্যে অনেকেই অসুখে পড়ি, তার মধ্যে খুসখুসে কাশিটা একবার ধরলে যেন ছেড়ে যাওয়ার নামটাই নেয় না। তাহলে কাশি তাড়ানোর সব থেকে বড় এবং সহজ উপায় হলো আনারসের জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলুন, দেখবেন জাদুর মতো কাজ করবে এই টোটকা।
৪) এখন আমাদের প্রত্যেকেরই ঘর, অফিস, সংসার, সামলিয়ে আর নিজেদের জন্য আলাদা সময় বার করা হয়ে ওঠেনা। আর সেই থেকে কিছুটা মানসিক চাপে ভুগছেন মানুষ, আর সেই থেকে ঘুম কম হচ্ছে, কাজে মন বসছে না ঠিক মতো, কেমন যেন খিট - খিটে মেজাজ তৈরি হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে যদি রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস আপেলের রস খেলে নিয়মিত, আপনার ঘুম খব ভালো হবে।
৫) তেজপাতা খুবই সামান্য একটা মশলা জাতীয় খাবার। কিন্তু এর রস খুবই উপকারী। যাদের মাইগ্রেন এর ব্যথা আছে, তাদের জন্য এই তেজপাতার রস খুবই উপকারী, তাছাড়া কোথাও আগুনে পুড়ে গেলে তেজপাতার রস ব্যথা উপশমে কাজ করে এবং পোড়া জায়গায়কে উপশম করে থাকে। তেজপাতাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, খনিজ উপাদান, এবং ফলিক এসিড, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি।
৬) ব্যবহারের পর তেল বা পানীয়র টেট্রাপ্যাক ফেলে দেবেন না বরং সেটা কেটে ডিপ ফ্রিজে আইস ট্রেতে পেতে দিন। মাছ মাংসের প্যাকেট আটকে যাবে না, এবং খুব সহজেই বের করতে পারবেন।
৭) ফ্রিজের বদগন্ধ দূর করতে সর্ষেগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। একটা প্লেটে কিছুটা সর্ষেগুঁড়ো ঢেলে তাতে একটু জল দিয়ে রাতভর ফ্রিজে রাখুন এবং ফ্রিজ খোলাই রাখুন। পরের দিন সকালে দেখবেন সব গন্ধ একেবারে উধাও।
৮) অনেকদিন অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা সেলোটেপের মুখ খুঁজে পাচ্ছেন না? মিনিট দশেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিন। সেলোটেপের রিলটা খুলে আসবে।
৯) অনেক বাড়িতেই আরশোলার খুব উপদ্রপ আছে। এক লিটার জলে দু’চার চামচ ডিটারজেণ্ট গুলে ঝাঁকিয়ে দিন। এবার স্প্রেগান বা পিচকিরিতে ভরে ঘরের আনাচে কানাচে যেখান আরশোলার উপদ্রব বেশি সেসব জায়গায় স্প্রে করে দিন। আরশোলা মরবে।
১০) গরু বা মোষের দুধ ঠিক সময় মতো গরম না করলে দুধ কেটে যাবার ভয় থাকে। দুধের মধ্যে দু-ফোঁটা সরষের তেল দিয়ে রাখলে দুধ যখনই ফোটান হোক না কেন দুধ কাটবে না।
“আচ্ছা, মিসেস লাহিড়ী, যারা ওয়ার্কিং পার্সন আছে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, চটজলদি ড্রেস চেঞ্জ না করেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ি, আর তারপর তেল-ঝোল লেগে ড্রেসটা পুরো গেলো। কোনো উপায় আছে এই দাগ তোলার জামা থেকে?” “হ্যাঁ, হ্যাঁ অবশ্যই। ভিনিগার, লেবু, মোটা দানার নুন, বেকিং সোডা এগুলো প্রাকৃতিক ক্লেনজার। জামার দাগ হাল্কা করতে এগুলোর সাহায্য নিতে পারেন।
এক কাপ ভিনিগারের মধ্যে ১০ ফোঁটা লেমন এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্টেন রিমুভার স্প্রে তৈরি করে নিন। যেখানে দাগ লাগবে, সেখানে এই স্প্রে ব্যবহার করুন।
অনেক সময় বৃষ্টির দিনে রাস্তাঘাটে বেরোলে, কাঁদা ছিটকিয়ে লাগে জামাকাপড়ে। সেই সময় যদি বাড়ি ফিরে সাথে সাথে টুথপেস্ট দিয়ে ঘষে নেন, তাহলে কাঁদার দাগের হাত থেকে রেহাই পাবেন।”
“অনেক ধন্যবাদ, মিসেস লাহিড়ী আপনাকে, আপনি যে এত সহজে এতোগুলো ঘরোয়া সমস্যার সমাধান দিয়ে দিলেন। আজ থেকে আমাদের অনেকটাই সুবিধা হবে, আমরা নির্ভাবনায় থাকতে পারবো।”