Flash news
    No Flash News Today..!!
Tuesday, May 21, 2024

৭৭-এ পা অপর্ণার

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

১৯৪৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর, ভারত স্বাধীন হতে বেশ কিছু মাস দেরি। তৎকালীন ভারতের হাইদ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করলেন অপুর সংসারের অপর্ণা। স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরে সাথে আত্মীয়তা এই নবজাতকের। বাবা গীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সন্তান আর মা ইরা দেবী অসমের লেখক জ্ঞানদাভিরাম বড়ুয়ার কন্যা। মেয়ের মধ্যে আভিজাত্য এবং স্মার্ট দুইএর সংমিশ্রণ আকৃষ্ট করেছিল সত্যজিৎ রায়কে। ১৯৫৭ সালের গোঁড়ার দিকে বিসম্ভর রায়ের জলসাঘর শেষে সত্যজিৎ রায় মনস্থির করলেন আবার অপুর ট্রিলজির শেষ ভাগ অপুর সংসার  তিনি করবেন। ততদিনে অপুর সংসারের অপুর সন্ধান পেয়েও গেছেন সত্যজিৎ, আবার শুধু অপরনার খোঁজ বাকি। দীর্ঘ দুই বছর ধরে অপর্ণাকে খুঁজে চলেছেন সত্যজিৎ রায়, কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও কোন লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত এক তেরো বর্ষীয় সুন্দরী মেয়েকে দেখলেন পরিচালক। শর্মিলা ঠাকুর তখন সেন্ট জন’স স্কুলের ছাত্রী। ঝকঝকে চেহারার মেয়েটিকে দেখে সত্যজিৎ রায় ঠিক করকেন এই হবে তার অপুর সংসারের অপর্ণা, অপুর স্ত্রী অপু আবার সংসার করবে। মেয়েটির বাড়ির খোঁজ শুরু করলেন পরিচালক, বাড়িতে গিয়ে বাবা গীতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কথা বলে তিনি পেলেন তার অপর্ণাকে।


১৯৫৯ সালে প্রথম ছবি অপুর সংসার, বাংলা সিনেমা পেলো দুই কিংবদন্তীকে, একজন বছর ২৩শের অপু সৌমিএ চট্টোপাধ্যায় ওপর জন বছর ১৫ শর্মিলা ঠাকুর, দু জনেরই অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি। ছবি মুক্তির পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি দুই নবাগত অভিনেতাদের। অপু অপর্ণার অভিনয় এখনও বাঙালির কাছে নস্টালজিক আইকন। সহজ সরল দাম্পত্য বাঙালি জীবনে ছাপ ফেলে গেছে। তারপরেই সত্যজিৎ রায়ের দেবী, আবার সকলের নজর কারলেন  শর্মিলা ঠাকুর। এরপর একের পর এক ছবি শেষ অঙ্ক, নির্জন সৈকতে, ছায়া সূর্য প্রভৃতি। এরপর  নায়ক এবং সীমাবদ্ধ ছবিতে পরিণত শর্মিলার আত্মপ্রকাশ।


শুধু বাংলা চলচ্চিত্র জগত নয় তিনি ছাপ ফেলেছিলেন হিন্দি সিনেমার জগতেও। ১৯৬৪ সালে বছর ১৮ শর্মিলা পাড়ি দেন বলিউডে। প্রথম ছবি শাম্মি কাপুরের সাথে কাশ্মির কি কলি, তারপর একে একে চুপকে চুপকে, আরাধনা, অনুপমা। ধীরে ধীরে অগণিত ভক্তের আইকন হয়ে ওঠেন সত্যজিতের অপর্ণা।


বরাবরই নতুন কিছু করতে ভালোবাসতেন শর্মিলা ঠাকুর। বংশের আভিজাত্য ভুলে বিকিনি শুটে নেমে পরতেন অনায়াসে, যা তখন কোন অভিনেত্রী ভাবতেও পারতেন না।  নিন্দার ঝড়কে তিনি কোন দিনই গ্রাহ্য করেননি। পেশাগত জীবন বাদ দিয়েও ব্যাক্তিগত জীবনে প্রথা ভেঙ্গে ছিলেন, তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদির সাথে দাম্পত্ত্য জীবন শুরু করেন বাঙালির সর্বকালের সেরা রোমান্টিক ছবির আইকন শর্মিলা ঠাকুর। ১৯৬৮ সালে সালে শুরু হয় নতুন পথ চলা। ১৯৭০ এ মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের অরন্যের দিন রাত্রি আবার একসাথে অপু অপর্ণা এবং ১৯৭১ এ সীমাবদ্ধ। একের পর এক মন মুগ্ধ করা অভিনয় তিনি উপহার দিয়েছেন সকলকে। তবে শর্মিলা ঠাকুর মা হওয়ার পরে নিজেকে আসতে আসতে গুটিয়ে ফেলেন, ছেড়ে দেন হাতি মেরে সাথি, খিলনের মতো ছবিও। তবে অল্প অভিনয় করলেও দক্ষতার অভাব তার কোন দিনই হয়নি, বরং আরও দক্ষ হয়েছেন তিনি। সেন্ট্রাল ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারপার্সন পদেও দায়িত্ব সামলেছেন বহুদিন। আজ ৮ই ডিসেম্বর ৭৭ বছরে পা দিলেন সত্যজিৎ এর অপর্ণা। ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতেও বাঙালি আটকে সেই তেরো বর্ষীয় শর্মিলাতেই।

Journalist Name : Sabyasachi Chatterjee

Related News