রাজ্যের পড়ুয়াদের ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বরের নেপথ্যে স্বয়ং মমতাই

banner

# Pravati Sangbad Digital Desk :

সোমবার নেতাজি ইনডোর থেকে বিতর্কিত মন্তব্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পড়ুয়াদের ঝুড়িঝুড়ি নম্বর পাওয়ার নেপথ্যের আসল কাহিনী শোনালেন মমতা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর পড়ুয়াদের অধিক নম্বর দেওয়া হয় বলেই সাফ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে রাজ্য রাজনীতিতে। সোমবার নেতাজি ইনডোরে পড়ুয়াদের স্মার্টফোন বিলির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই বক্তৃতার সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পূর্বে স্কুল কলেজগুলিতে পড়ুয়াদের অত্যন্ত কম নম্বর দেওয়া হতো কিন্তু বর্তমানে পড়ুয়াদের অধিক হারে নম্বর দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, মূখ্যমন্ত্রী জানান তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই শিক্ষাক্ষেত্রে এই পরিবর্তন এসেছে। সিবিএসই - আইসিএস‌ই বোর্ডের সাথে পাল্লা দিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনামূলক বেশি নম্বর প্রদান করা হয় বলেই জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, “আগে স্কুল কলেজে কত কম নম্বর পেতাম আমাদের সময়ে। নম্বরই দিত না। হাত দিয়ে নম্বরই গলত না। আর এখন দেখো কেউ ৮৮ পাচ্ছে, কেউ ৯০ পাচ্ছে, কেউ ৯৯ পাচ্ছে।” যদিও হঠাৎ এই নম্বর বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণটিও খোলসা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী‌-ই। তিনি জানান, “আমি ক্ষমতায় আসার পরে বলেছি সিবিএসই আছে, আইসিএসই আছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতায় যাবেন। সেখানে সিবিএসই -এর ছেলেমেয়েরা যদি ৯০ পায়। আর আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি না পায়, তাহলে প্রতিযোগিতায় কী করে সফল হবে। সেই জন্যই বাড়িয়ে দাও নম্বর। এমন ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করো, যাতে তাঁরা দেশ-বিদেশের নজর কাড়তে পারে।” নেতাজি ইনডোরের ওই অনুষ্ঠান থেকেই তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখানে পড়াশুনোর সুযোগ অনেক বেশি এখন। বাইরের থেকেও বেশি সুযোগ আমাদের এখানে। ইউক্রেনে আপনারা দেখলেন তো ছেলে-মেয়েগুলো পড়তে গেলো, তারপরে কী দশা হল। কিন্তু আমাদের এখানে এখন রাঙ্কিং এর দিক থেকে যাদবপুর, কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্য়ালয় সব এক কিংবা দুই নম্বরে আছে। কত কলেজ করেছি আমরা। আমাদের টিচাররা খুব ভালো পড়ান। ভালো ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করেন। ”মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। নিন্দার ঝড় বইতে থাকে বাংলার শিক্ষাঙ্গন গুলিতে। মুখ্যমন্ত্রীর নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তীব্র কটাক্ষ করেছে রাজ্যের বিরোধী শিবিরগুলি। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী‌ও। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এদিন বাংলার মেধাকে অপমান করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর দয়াদাক্ষিণ্যেই ছেলেমেয়েরা বেশি নম্বর পাচ্ছেন। এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। ”একই সাথে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশ হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষকমন্ডলীর একাংশ। শিক্ষকদের মতে, “পরীক্ষায় যথাযথ মূল্যায়ন না হলে পড়ুয়ারা বুঝতে পারবে না, তারা কতটা শিখল। শিক্ষকেরাও বুঝতে পারবেন না, তাঁরা কতটা শেখাতে পারলেন। যা পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।” এক‌ইসাথে পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রের মতে, “পরীক্ষার খাতায় নম্বর দেওয়ার মতো জায়গা থাকলে তখনই শিক্ষকেরা নম্বর দিতে পারেন। তা না থাকলেও বেশি নম্বর দেওয়া যায় নাকি? পড়ুয়ারা যদি অকারণ বেশি নম্বর পায়, তা হলে তাদের ভবিষ্যতের পক্ষে মোটেই ভাল হবে না। ”বিগত দু-বছরের ঘরবন্দী পরিস্থিতিতে রাজ্যের পড়ুয়াদের নির্ভর করতে হয়েছিল অনলাইন পঠন পাঠনের উপর। সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে তুলনামূলক বেশি নম্বর প্রদান করার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। তবে সেই মহামারী পরিস্থিতি আজ আর নেই, অফলাইনে জোরকদমে চলছে পড়াশোনার কাজ। তবু কেন পড়ুয়াদের প্রয়োজনাতিরিক্ত নম্বর প্রদান করা হবে, সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে বাংলার শিক্ষাঙ্গন গুলিতে। 

#Source: online/Digital/Social Media News   # Representative Image

Journalist Name : Uddyaloke Bairagi

Related News