চীনে ক্রমশ বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। দেশজুড়ে তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে চলতি মাসে করোনার কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নিতে বাধ্য হয় চীন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। শনাক্ত বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে। সেই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করেই যেন দেশটিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। আগামী তিন মাসের মধ্যেই চিনের এক তৃতীয়াংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হবেন, ১৩ থেকে ২১ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে সংক্রমণে, এমনটাই জানানো হয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে। চিনের এই পরিস্থিতি ভয় ধরাচ্ছে বিশ্বকেও। ফের তিন বছর আগের স্মৃতি ফিরে আসতে পারে বলে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। বিশ্বের একাধিক দেশ যখন কোভিড মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছিল, তখন ব্যতিক্রমী ছিল চিন। গত অক্টোবর মাস থেকে শি জিনপিংয়ের দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। কোভিড মোকাবিলায় সরকারি তরফে ঘোষণা করা জিরো কোভিড নীতির। করোনা সংক্রমণ নিয়ে নীতিতে বড় পরিবর্তন আনল চিনা প্রশাসন। বুধবার চিন সরকারের তরফে জানানো হল, গত ২০ ডিসেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণে কোনও ব্যক্তির মৃত্য়ু হয়নি। এর কারণ হল করোনায় মৃতদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে নিয়মে পরিবর্তন করা হয়েছে। চিন সরকারের নতুন নিয়ম, করোনা সংক্রমিত যারা সরাসরি রেসপিরেটরি ফেলিওর থেকে মারা যাবেন, একমাত্র তাদেরই করোনায় মৃত বলে গণ্য করা হবে। চিনের সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যাদের রেসপিরেটরি ফেলিওর থেকে মৃত্যু হবে, একমাত্র তাদেরই করোনায় মৃত বলে গণ্য় করা হবে। করোনার অন্য কোনও উপসর্গ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যদি কারোর মৃত্যু হয়, তবে তাঁকে করোনায় মৃত বলে গণ্য় করা হবে না। এরফলে চিনে দৈনিক করোনায় মৃতের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে। মঙ্গলবারই বেজিংয়ে একজনের করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারে এই নতুন নীতি ঘোষণার পরই সরকারি নথিতে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ১ থেকে শূন্য করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চিনে নতুন করে ৩১০১ জন উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৭৬-এ পৌঁছল।
শীত মৌসুমে চীনে করোনার অন্তত ৩টি ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে প্রথম ঢেউটি চলছে বলেও দাবি তাদের। এ ছাড়া ২১ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপী চীনা নববর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে আরেকটি নতুন ঢেউ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এরই মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বয়স্কদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্যাকিসন নেয়ার বিষয়ে অনীহার কথা জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
প্রায়ই দৈনিক ৩ থেকে ৪ জনের মৃত্যু হচ্ছে, সেখানেই শশ্মানকর্মীরা জানাচ্ছেন, এত পরিমাণে মৃতদেহ আসছে যে দেহ রাখার জায়গা থাকছে না। তাদের কথা অনুযায়ী দৈনিক ২২ টি দেহ পোড়াচ্ছেন, অথচ আগে হয়তো ২ থেকে ৩টি দেহ পোড়াতে হত। সমগ্র চিন জুড়ে প্রায় একই ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।