Flash news
    No Flash News Today..!!
Monday, May 6, 2024

গঙ্গা আমার মা,পদ্মা আমার মা ;'পদ্মাসেতু', কিছু আবেগ,লক্ষ্য ও বিনিদ্র রজনী

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

১৯৯৮ এর ১৮-ই সেপ্টেম্বর, একটা প্রোজেক্ট-এর প্রস্তাবনা,একটি সেতুবন্ধন যার ভৌগোলিক অবস্থান বিস্তারলাভ করবে পদ্মা নদীর যে অংশের প্রবাহপথ ঢাকা-খুলনা-মাওয়া-ভাঙ্গা হাইওয়ের মধ্য দিয়ে তার সমান্তরালে ; উদ্দেশ্য, রাজধানী শহর ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন। প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ এবং ১৮ কিমি প্রস্থবিশিষ্ট ( তৎকালীন প্রস্তাবনা অনুযায়ী) বিবেচিত হয়েছিল দেশের সম্ভাব্য দীর্ঘতম সেতুবন্ধ হিসেবে। এই প্রস্তাবনা কতগুলি ধাপে পেল সফল পরিণতি দীর্ঘ ২৪ বছরের সময়ধারায় একটু দেখে নেওয়া যাক
পদ্মা সেতুর বিবর্তনঃ
১৯৯৮-প্রস্তাবনা 
১৯৯৯-২০০৪ঃ এই সময়কালের মধ্যে নির্মাণ সমাপ্ত করার প্রস্তাবনা। প্রস্তাবিত বাজেট এ সহায়তা প্রদান বৈদেশিক ও স্থানীয় সূত্রের (যথাক্রমে ২,৮৯৩ কোটি টাকা এবং ৭৫০ কোটি টাকা)।
২০০৬-২০০৭ঃ বার্ষিক উন্নয়ন অনুষ্ঠানসূচী (Annual Development Programme)এ তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পদ্মা মাল্টিপারপাস ব্রিজ নির্মাণের  সিদ্ধান্তগ্রহণ।
২০১০-২০১৫ঃ বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি কর্তৃক  টেন্ডার প্রকাশ, ২০১১ র মধ্যে নির্মাণ আরম্ভের প্রয়াস এবং ২০১৩-২০১৫ র মধ্যে নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করা। কিন্তু বিধি বাম, দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ফান্ডিং বন্ধ করে, যার পদক্ষেপ অনুসরণ করেন অন্যান্য লগ্নিকারীরা; অতঃপর সরকারের তরফে নিজস্ব অর্থসাহায্যের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৪ এ চীন কর্তৃক  প্রোজেক্ট  কস্ট-এর ৭০%  শতাংশ বহনের এবং বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার ভিত্তিতে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রদান ও ১৭-ই জুন উক্ত দায়িত্বে নির্বাচিত  হওয়া। ৬.১৫ কিমি এই সেতুর নির্মাণ- খরচ দাঁড়ায় ৯১.৭২ বিলিয়ন (বাংলাদেশী মুদ্রা ‘টাকার’ ভিত্তিতে)। অনেক পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ ও গঙ্গার ওপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতুবন্ধের ২৫-শে জুন  উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের অনুষ্ঠানসূচীঃ
১)শেখ হাসিনা কর্তৃক মাওয়া প্রান্তে সেতু উদ্বোধন
২)মাদারিপুরে শিবচর এলাকায় আয়োজিত বিশাল জনসভায় মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা প্রদান।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণঃ
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয়দের একাংশের মতামত হল ,আগামি বছরের অর্থাৎ ২০২৩-এর  নির্বাচনী পটভূমিকায় শেখ হাসিনার জয়লাভের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লড়াই হবে হাসিনার স্বপ্নের ‘মুজিবের বাংলাদেশ’এর সঙ্গে শ্রীমতী খালেদা জিয়ার ‘বিএনপি’ –র।  
বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নয়নঃ
“মাঝখানে আজ বহমান পানি রচে ব্যাবধান, রচে ব্যাবধান  তোমার আমার রচে ব্যাবধান দুই বাংলার” কমবে দুই বাংলার দূরত্ব। কলকাতা- ঢাকা বাস পরিবহনের ক্ষেত্রে সেই বাস পদ্মা পার হত স্টিমারে যার ফলে সময় দীর্ঘায়িত হত, কিন্তু পদ্মাসেতুর অবস্থানের ফলে এখন তা সরাসরি ঢাকায় পৌঁছাবে।  বাংলাদেশের ভারতীয় হাই-কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী  শেখ হাসিনাকে ভারতসফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং সেপ্টেম্বর হাসিনার সম্ভাব্য ভারতসফরের আগেই হয়ত ভারত-বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হবে ;এর পশ্চাতেও থাকবে পদ্মাসেতুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কারণ এর মাধ্যমে পূর্ব-বঙ্গের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের মুল ভূখণ্ডের সংযোগ আরও ভাল হবে এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভারত  ইতিমধ্যেই অনুমতিপ্রাপ্ত যে বঙ্গোপসাগরের  তীরবর্তী দুটি বন্দর যথাক্রমে মংলা ও চট্টগ্রামের দূরত্ব একশো কিলোমিটার কমে যাবে।
এ শুধু সেতুবন্ধ নয় ,এ মুক্তির জয়ডঙ্কা। মুক্তি বিদেশি ঋণ আর্থিক সাহায্যের দাসত্ব থেকে; মুক্তি দেশের দুই অংশের দূরত্ব থেকে; এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের স্ব-অর্জিত অর্থে নির্মিত। আজ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের স্লোগানটি“ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো”খুব প্রাসঙ্গিক । এ পদ্মা রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের,এ পদ্মা ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুলের, এ পদ্মা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মাঝিকুলের, এ পদ্মা পল্লীকবি জসিমুদ্দিন-এর 'রাখাল ছেলের' এর। এ পদ্মার বুকে ভাটিয়ালীর সুর; করতে হবে বিশ্ব জয় পদ্মা ,তোমায় বইতে হবে বহুদূর।

Journalist Name : Suchismita Dasgupta

Related News