G20 'দিল্লি ঘোষণাপত্র'- ভারতের কূটনৈতিক জয়

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

এবার সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হল সেই 'দিল্লি ঘোষণাপত্র'। সেখানে লেখা হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেই বিখ্যাত কথা-- 'এটা যুদ্ধের সময় নয়'। দীর্ঘ টালবাহানার পর জি২০-র সভাপতি দেশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার 'ভারত মন্ডপমে' এই সংবাদ ঘোষণা করেন যে, শেষ পর্যন্ত সকলের সহযোগিতায় 'নিউ দিল্লি জি২০ ঘোষণাপত্র' গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে সব দেশই!

জি২০-কে নিছক ভূরাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের মঞ্চ না করে তুলে বরং তাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আলোচনা ক্ষেত্র করে তোলাই ছিল ভারতের লক্ষ্য। অথচ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে জি২০-র সেই চরিত্রটাই নষ্ট হয়ে যায়। অর্থনীতি, উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতাকে আবার এই গোষ্ঠীর আলোচনার মূল স্রোতে নিয়ে আসা গিয়েছে বলেই ভারতের দাবি। 

নয়াদিল্লির ঘোষণাপত্র যাতে সকলে গ্রহণ করে তার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়েছেন অমিতাভ কান্ত। সর্বসম্মতিতে পৌঁছেতে অমিতাভ ৩০০টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। ২০০ ঘণ্টা একটানা আলোচনা চালিয়েছেন। ঘোষণাপত্রের প্রায় ১৫টি খসড়া বানানো হয়েছিল। অমিতাভের সঙ্গেই এই কাজ করেছেন তাঁর আরও দুই সঙ্গী। রবিবারের টুইটে সেই দুই সঙ্গীর সঙ্গে নিজের ছবি এক্স (অতীতের টুইটার) হ্যান্ডল থেকে শেয়ার করেছেন অমিতাভ। সেখানেই তিনি তাঁদের প্রচেষ্টার কথা বলেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে প্রস্তাবে সর্বসম্মতিতে পৌঁছনো সবথেকে কঠিন কাজ ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধের উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রের অষ্টম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ সভায় গৃহীত প্রস্তাবই মানতে হবে। কোনও দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত চলবে না। গায়ের জোরে কোনও দেশের ভৌগোলিক সীমানা লঙ্ঘন নয় বা তার পরিবর্তন নয়। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকিও কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।


অমিতাভের এই নিরলস প্রচেষ্টা নিয়ে তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন শাসক থেকে বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখে শনিবারই শেরপা অমিতাভ কান্তের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও প্রশংসা করেছেন কান্তকে।

জি২০ বৈঠকে দিল্লি ঘোষণাপত্র গৃহীত না হলে তা ভারতের নেতৃত্বের পক্ষে একটা বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হত। তবে শেষ পর্যন্ত ভারতের কূটনীতিকেরা সমাধানসূত্রের খোঁজ দিতে পেরেছেন। ঘোষণাপত্রে কয়েকটি অধ্যায় নতুন করে লিখে যোগ করা হল। যেখানে পরিষ্কার করে বলা হল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গও ঘোষণাপত্রে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হল, তবে রাশিয়ার নাম কোথাও সরাসরি উচ্চারণ করা হল না।

৩৭ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রকে সর্বসম্মত করে তুলতে যে চারটি অনুচ্ছেদ নতুন করে লিখতে হয়েছে তার প্রতিটি শব্দ খুঁটিয়ে দেখে তবেই প্রতিটি দেশ তা অনুমোদন করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা ভারতের জয়ই। কূটনৈতিক জয়। ঘোষণাপত্রে অবশ্য 'ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' শব্দবন্ধের বদলে 'ইউক্রেনে যুদ্ধ' শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় সমস্যার সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসে বলে মত সব পক্ষের।

এই সাফল্যের পর কান্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, “যখন আমি জি২০ প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যুক্ত হই, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, ভারতের প্রেসিডেন্সি যেন সিদ্ধান্তমূলক, বলিষ্ঠ, পদক্ষেপনির্ভর হয়। নয়াদিল্লির ঘোষণাপত্রে ৮৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এই গোষ্ঠীভুক্ত সমস্ত দেশ এই ৮৩টি অনুচ্ছেদেই সর্বসম্মত হয়েছে। ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ‘প্ল্যানেট, পিপল পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ যে ৮টি অনুচ্ছেদ ছিল, তা ১০০ শতাংশ সর্বসম্মত।”

Journalist Name : প্রিয়শ্রী

Related News