Flash news
    No Flash News Today..!!
Sunday, May 12, 2024

মন্দার: অনির্বান ভট্টাচার্যের হাত ধরে বাংলার ঘরে 'ম্যাকবেথ'

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

“কালের কোলে কপাল ফেরে, কেউ রাজা, কেউ রাজার বাপ।” – “এরকম একটি সংলাপ নিয়ে একালের অন্যতম জনপ্রিয় ও শক্তিশালী অভিনেতা  এবং পরিচালক অনির্বান ভট্টাচার্যের হাত ধরে, শেক্সপিয়ার রচিত “ম্যাকবেথের” পুনর্জন্ম হলো,বাংলার ঘরে এলো “মন্দার।” সম্প্রতি ওটিটি মঞ্চে দেখা মিলেছে, “মন্দার”রের।

বাংলার নতুন করে জেগে ওঠার সাথে জড়িয়ে আছে শেক্সপিয়ারের চর্চা।  গিরিশচন্দ্র ঘোষের কলমের ছোঁয়াতে বাঙালি “ম্যাকবেথ” য়ের প্রথম অনুবাদ লাভ করে। আর দৃশ্য-শ্রাব্য (audio-visual)মাধ্যমে এর আগেও বাংলায় ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে প্রচুর কাজ হয়েছে। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে “স্বপ্নসন্ধানী”  থিয়েটার দলের অসামান্য প্রযোজনার কথা।ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দারুন ভাবে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ কোনোদিনও ভাবতেই পারে নি, এই ভাবে “ম্যাকবেথ”য়ের পুনর্জন্ম খুবই জনপ্রিয় অভিনেতা অনির্বান ভট্টাচার্যের হাত ধরে ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসবে।


গল্পের মূল টেক্সট একই নেই, তাতে করা হয়েছে কিছু বাড়তি জিনিস যোগ, আবার কিছু জিনিস বুঝে-শুনে দেওয়া হয়েছে বাদ, চরিত্রগুলোকেও বদলে দেওয়া হয়েছে, আর পুরো ওয়েব সিরিজ জুড়ে শুধুই দ্বন্দ্ব, হিংসা-প্রতিহিংসা, যৌনতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ছড়িয়ে রয়েছে।

শেক্সপিয়রের “ম্যাকবেথ” শুধু এই যুগের “মন্দার”রের মধ্যে দিয়েই নয়,বরং খোঁজ নিলে দেখা যাবে এর আগেও একাধিকবার সিনে-ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে এসেছে। ২০০৪ সালের “মকবুল”, ২০১৭ সালের দক্ষিণী সিনেমা “বিরাম”, চলতি বছরের শুরুতেই ওটিটি প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে “জোজি”। এই সবগুলি সিনেমার মধ্যে দিয়ে “ম্যাকবেথ” বারবার ফিরে এসেছে আমাদের কাছে।


 “মন্দারের” প্রতিটা চরিত্রের নাম পুরোপুরি আলাদা করা হয়েছে এখানে। এমনকি আসল “ম্যাকবেথের” গল্পের সাথে “মন্দারের” গল্পের অনেকটাই ফারাক দেখা গেছে। সিরিজের পরিচালক অনির্বান ভট্টাচার্য এখানে আসল “ম্যাকবেথের” গল্প হুবহু তুলে ধরেন নি। সুতরাং যারা “ম্যাকবেথ” গল্পটি জানেন অথবা যারা জানেন না, তাদের জন্য কিন্তু বিশাল বড় চমক রয়েছে এখানে, একবারটি না দেখলেই যে নয়।

ওটিটি প্লাটফর্মে দিন দিন “মন্দারের” সাবস্ক্রাইবার বেশ ভালোই বাড়ছে, দর্শক রীতিমতো খুব উৎসাহিত নতুনত্বের ছোঁয়া পেয়ে, সিরিজের চরিত্র,গল্প সব মিলিয়ে মানুষ দারুন উপভোগ করছে এই ফারাকটাকে। অনির্বাণের বঙ্গীকরণে লেডি ম্যাকবেথ হয়েছে লাইলি, ডানকানের অনুচর ব্যাঙ্কো হয়েছে বঙ্কা, ম্যাকডাফ হয়েছে মদন, ডানকানের বড় ছেলে ম্যালকম হয়েছে মোঞ্চা, ব্যাঙ্কোর ছেলে ফ্লিয়ান্স এখানে ফন্টুস। পাশাপাশি মূল নাটকে ডানকানের স্ত্রীর উল্লেখ না থাকলেও এখানে সেই চরিত্রটি রাখা হয়েছে। আবার ম্যাকডাফের স্ত্রীকে করা হয়েছে তার বোন। এভাবেই নিজের মতো করে মন্দারকে নির্মাণ করেছেন অনির্বাণ। গড়ে তুলেছেন গেইলপুরের নিজস্ব ভুবন। সবথেকে বড় বদল সম্ভবত বিখ্যাত ‘থ্রি উইচেস’-এর রূপান্তর। এখানে তারা মা, ছেলে ও পোষ্য বিড়াল। গা ছমছমে, অস্বস্তিকর তাদের উপস্থিতি। গেইলপুরের কালের হিসেবই সারাক্ষণ করে চলেছে তারা। সর্বত্রই ঘুরছে তাদের দৃষ্টি,বেশ থ্রীলিং ব্যাপার আছে এটা বলাই বাহুল্য।


অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, কিংবা দেবেশ রায়চৌধুরী, সোহিনী সরকারের মতো সুপরিচিতরাই কেবল নন, অভিনয়ে সকলেই একেবারে বাজিমাত করে দিয়েছেন। মন্দারের ভূমিকায় দেবাশিসের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। কেবল চোখের অভিব্যক্তিতেই মন্দারকে জ্যান্ত করে তোলেন তিনি।

ছবিতে অনির্বাণের  ভট্টাচার্যের চরিত্রটিও  একেবারে নতুন। গোটা গেইলপুরে সে এক মূর্তিমান ব্যতিক্রম। বাকিদের কথায় যখন আঞ্চলিক বাংলা ভাষার স্পষ্ট আদল রয়েছে,তখন  সেখানে পুলিশ অফিসার মুকাদ্দর(অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য)শুরু থেকেই ইংরেজিতে কথা বলতে থাকে। তার বাংলাও একেবারে ‘পালিশ’ করা। চরিত্রটি ধীরে ধীরে প্রবেশ করে গল্পে। নিজের জন্য চরিত্রটি পরিপাটি করেই তৈরি করেছেন অনির্বাণ। তবে এটা মানতেই হবে, যে ধরনের চরিত্রে তাঁকে আমরা দেখতে অভ্যস্ত এখানে তিনি তার থেকে একেবারেই আলাদা একটি চরিত্র বুনেছেন। অভিনয়ের সঙ্গেই এসে পড়ে সিনেমাটোগ্রাফির কথা। সৌমিক হালদারের দুরন্ত ক্যামেরার সঙ্গে যোগ্য  ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের। সারাক্ষণ একটা টানটান ব্যাপার,কী হয় কী হয় ভাব বজায় রাখতে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো।


মধ্যযুগে লেখা সেই নাটক আজও কতটা তরতাজা তা যেন নতুন করে বোঝা যায় মন্দারের মুখোমুখি হয়ে। আসলে লোভ, রক্তপিপাসা, ক্ষমতার লোভ, অপরাধবোধ, নারীকে দখল করে রাখার দ্বন্দ্বের মতো বিষয় যে কখনও পুরনো হওয়ার নয়। তাই বারবার এই মহাসৃষ্টির কাছে ফিরতেই হয় আমাদের। পৃথিবীর আসল নামই যে গেইলপুর।

Journalist Name : Sayantika Biswas

Related News