"অহিংসা ই পরম ধর্ম" ।"জীব হত্যা মহাপাপ "। ওপরের কথাগুলো থেকে বোঝাই যায় শাস্ত্রে কখনোই জীব হত্যাকে সঠিক বলে বিবেচনা করা হয়নি। জীব হত্যা তো আমরা প্রতিদিন সবাই করে চলেছি। কখনো বা আমরা নিজেদের উদরপূর্তির জন্য সেই হত্যা করি ,আবার কখনো বা নিজেদের শরীরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কিছু কীটনাশক ব্যবহার করে সেই জীব হত্যা করি। তবে জীব হত্যার বিচার বোধ হয় সেই জীবের আকার বিবেচনা করে করা হয়। তাই মশা ,মাছি মারা বা প্রজাপতি রঙিন পাখনা মেলার আগেই শুয়োপোকা কে মেরে ফেলা হত্যার মধ্যে পড়ে না।এ তো গেল মরণশীল মানুষের কথা। কিন্তু এই মরণশীল মানুষ আবার দেবতা বা আল্লাহ-র কাছেও জীব হত্যা দিতে চায়। তার অবশ্য একটি পবিত্র নাম আছে ,একে বলা হয় 'বলি' বা 'কুরবানি'। দেবদেবীদের অথবা আল্লাহ-কে প্রসন্ন করার জন্য কখনো বা নিজের পরিবার অথবা সন্তানের সুস্থতা কামনা করে অন্য নিরীহ প্রাণীর সন্তানদের বলি দিতে দুবার ভাবে না জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী এই মানুষ রা। কেউ কেউ আবার বলির সময় নির্মম পশু হত্যা না দেখতে পারে কোন কোন সবজিও বলি দেয়। কিন্তু বলির আসল মানে জানা আছে কি? বলির আসল মানে হল কোন কিছু যজ্ঞ, সমর্পণ ,আহুতি অথবা নিবেদন ।আর এই যজ্ঞ, সমর্পণ ,নিবেদন এর মত মহান জিনিস গুলিকে মানুষ পশু হত্যার মতো একটা ক্ষুদ্র গণ্ডিতে বেঁধে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বাড়ির পুজোয় এবং বিভিন্ন মন্দিরে পুজোতে পাঁঠা ,ছাগল অথবা মহিষ বলি দেওয়া দেওয়া হয়।আবার বকরি ঈদ এ মূলত গরু এছাড়া ছাগল বা মহিষ কুরবানি দেওয়া হয়।ইসলাম ধর্মমতে, মানুষ অপর প্রাণীর প্রতি দয়াশীল।তাহলে 'আল্লাহ'- এর নাম এ দিনের পর দিন এমন পশুহত্যা ঠিক যেনো ছন্দের সাথে মেলেনা । আবার কোনো শাস্ত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা দেবদেবীর পুজোতে এই বলির কথা। শাস্ত্রে লেখা আছে, মা এর পূজোতে 'ছাগের বলি'। এই ছাগ অর্থে কোন পাঁঠা বা ছাগল নয়। এখানে 'ছাগ' বলতে বোঝানো হয়েছে ষড় রিপুকে।'ষড়' কথার অর্থ হল ৬ এবং 'রিপু' কথার অর্থ হলো শত্রু। এই ছটি শত্রু হলো মানুষের কাম, ক্রোধ , লোভ, মোহ, মাৎসর্য্য(হিংসা), মদ (অহংকার)। অর্থাৎ দেবী কোন পশু নয় বরং মানুষের নিজেদের মধ্যে থাকা এই ছটি শত্রুর আহুতি চেয়েছেন ।কিন্তু মানুষ বছরের পর বছর সেই প্রকৃত অর্থ না বুঝে অবলা প্রাণীদের বলি দিয়ে চলেছে। আর ভাবছে বুঝি খুব পূন্য অর্জন হচ্ছে। কিন্তু আস্তে আস্তে পাপের গভীরে নিমজ্জিত হচ্ছে । মা জগৎ জননী অথবা আল্লাহ্ দুনিয়ার রক্ষাকর্তা, তাহলে কিভাবে তিনি তার সন্তানের রক্ত পান করতে পারেন ।তা কি কখনো সম্ভব?