পিরিয়ডের সময় এলেই সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে ব্যথা নিয়ে। অনেকেই ভোগেন ডিসমেনোরিয়ায়। পিরিয়ড মানেই পেনকিলার। এটাই যেন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পিরিয়ড নিয়ে হাজারো সমস্যা প্রতিনিয়তই সামলাচ্ছেন মেয়েরা। কিন্তু মাসের ওই কয়েকটা দিনেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচার ফুরসত মেলেনা মেয়েদের। ফলে দিনের শেষে অফিস-পরিবার সব সামলেও অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে দিন কাটাতে হয় মেয়েদের। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে কোমর, ঊরু ও পা পর্যন্ত। পিরিয়ড চলাকালীন অসহ্য যন্ত্রণার অন্যতম কারণ হতে পারে জরায়ু মোটা এবং আয়তনে বড় হয়ে গেলে। পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত পেটে, কোমরে এবং ঊরুতে হয়ে থাকে । কখনো কখনো পেটের ব্যথা কিছু সময় পরপর প্রচণ্ডভাবে কামড়ে ধরে । ব্যথা একেক বার পিরিয়ডের সময়ে একেক রকম হতে পারে ।এই ব্যথা সাধারনত মাসিক শুরু হওয়ার সময়েই শুরু হয় । তবে কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এই ব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং তা মাসিক চলাকালীন স্থায়ী থাকে । পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।
মাসিকের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হল –
তুলসী পাতা – এক গ্লাস পানিতে ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন । পানি ভালোভাবে ফুটে ওঠার পর তা ছেঁকে নিয়ে তাতে কিছুটা মধু মিশিয়ে পান করুন । পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দিনে দুই থেকে তিনবার এভাবে তুলসী পাতার পানি পান করতে পারেন । মাসিকের পেট ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে তুলসি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে । তুলসীর উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে তুলসী পাতার মধ্যে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ব্যথা উপশম বা দূর করার ক্ষমতা । এই ভিত্তিতে বলা যায় যে, তুলসি পাতা পিরিয়ডের সময় ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে ।
মাসিকের ব্যথা উপশম করতে আপনার ক্যামোমাইল চা ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহার করার জন্য, আপনার অবশ্যই ক্যামোমাইল টি ব্যাগ এবং মধু থাকতে হবে। এই প্রতিকারটি চেষ্টা করার জন্য, আপনাকে প্রায় দশ মিনিটের জন্য গরম জলে ক্যামোমাইল টি ব্যাগটি ডুবিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর যখন এই পানি কিছুটা ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন আপনি এতে মধু মিশিয়ে খান। পিরিয়ডের সময় দুর্বল বোধ করলে দিনে অন্তত দুবার এই বিশেষ চা খান।
বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, এই মেথি বীজ মাসিকের যন্ত্রণা প্রশমিত করতে অত্যন্ত কার্যকর। মাসিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং তারপর সেই পানি পান করুন। এতে যন্ত্রণা অনেকটা কমিয়ে দিবে।
মাসিকের ব্যথা নিবারণের জন্য গরম সেঁক সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তলপেটে গরম সেঁক দিলে এটি জরায়ুর সংকোচনকারী পেশীগুলোকে শিথিল করতে সহায়তা করে।
এ সময় নারীদের পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন, কারণ এ সময় নারীদের শরীরে রক্তশূন্যতার সম্মুখীন হতে হয়। আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার প্রচুর পরিমাণে খান। নিজেকে সুস্থ রাখতে সবুজ শাক, বাদাম ইত্যাদি খান। কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো আপনার ব্যথাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
ভিটামিন ডি এর একটি ডোজ আপনার মাসিকের ব্যথা উপশম করতে অনেক বেশি কাজ করে। মাসিকের ব্যথার জন্য দায়ী প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন ভিটামিন ডি এর সাহায্যে কমানো যায়। এই জন্য আপনার খাদ্যের মাধ্যমে ভিটামিন ডি গ্রহণ শুরু করুন। এ জন্য খাবারে মাছ, পনির, ডিম, কমলার রস ও ডাল রাখতে হবে।