জরায়ু মুখের ক্যানসার (Cervical Cancer) প্রতিরোধে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল ভারত। দেশেই ক্যানসার প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার দাবি। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হল। সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (Serum Institute of India) এবং বায়োটেকনোলজি মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে এই ভ্যাকসিন। ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার বিনিময়ে এই ভ্যাকসিন কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ। প্রসঙ্গত, ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি মহিলাদের মধ্যেই জরায়ু মুখের ক্যানসারের প্রবণতা বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ শুধুমাত্র জরায়ুর ক্যান্সারই নয়, পেনাইল ক্যান্সার, মলদ্বারের ক্যানসার এবং অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার। অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার গলার পিছনের অংশ অরোফ্যারিংসে হয়। এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি এই ভ্যাকসিন নেন, তাহলে তিনি চারটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারবেন।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্র্যাথক্লাইডের সহযোগিতায় স্কটল্যান্ডের পাবলিক হেলথের গবেষণায় দেখা গিয়েছে এইচপিভি ভ্যাকসিন সার্ভাইকাল ক্যান্সারের প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। ২০০৮ সাল থেকে স্কটল্যান্ডে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী বালিকাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাঁদের বর্তমান পরিস্থিতি যাচাই করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে বর্তমানে এইসব মহিলাদের কারও মধ্যেই একটিও ভাইরাস সংক্রমণ দেখা যায়নি। এই গবেষণায় ১০০ শতাংশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরও বলছেন, প্রত্যেকের জন্য এই ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি মারণ রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। তবে ভ্যাকসিন নিলেও সময়ে সময়ে স্ক্রিনিংও প্রয়োজন। কারণ ভ্যাকসিন সব ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ভূ - বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বৃহস্পতিবার বিশেষ অনুষ্ঠানে জানান, ‘‘জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বার অতি দ্রুত সাধারণের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতি প্রতিরোধ মূলক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। এর ফলস্বরূপ সারভাইকাল ক্যানসারের টিকার মতো প্রতিষেধক তৈরির কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলি সব সময়ে তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পায় না। কর্কট রোগের ক্ষেত্রে দেশের বিজ্ঞানীরা এত বড় সাফল্য পেয়েছেন আর তাঁদের এই সাফল্য উদযাপনের করতেই আজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার আদার পুনাওয়ালা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘জরায়ু মুখ ক্যানসারের টিকার দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যেই ধার্য করা হবে। চূড়ান্ত দাম এখনও নির্ধারণ করা বাকি। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষেই এই টিকা বাজারে আনতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। প্রথম পর্যায় কেবল সরকারি হাসপাতাল গুলি থেকেই এই টিকা নেওয়া যাবে। পরের বছর থেকে কিছু বেসরকারি মাধ্যমেও এই টিকা পাওয়া যাবে।