রথযাত্রার পূণ্যলগ্নে উৎসব সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

"রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।''
 - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রথ শব্দের অর্থ অক্ষ,বা যুদ্ধযান বা চাকা যুক্ত এক প্রকার যানবাহন,অথবা ঘোড়ায় টানা যাত্রীবাহী গাড়ি। পৌরাণিক কাহিনী গুলো তে রথের ব্যবহার মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে পাওয়া যেতো। ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক  দৃষ্টিকোণ থেকে রথযাত্রার প্রাসঙ্গিকতা হলো কাঠের তৈরী এক প্রকার যান যেখানে ভগবান স্বয়ং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। আর এই ঐশ্বরিক সরণই রথযাত্রা উৎসব হিসেবে পরিচিত।
জগন্নাথের মূর্তির গড়ন অনুসারে তাকে কাল্য বা কালের দেবতা বলা হয়। অর্থাৎ জগন্নাথ দেবের মধ্যে শাক্ত ও বৈষ্ণব উভয় তত্ত্ব লক্ষ করা যায়। জগন্নাথ দেবের মূর্তি নিয়ে অনেক গল্প কথা প্রচলিত। কিন্তু সেই সবের বাইরে গিয়ে আমরা যদি শাস্ত্রের কথা দেখি তাহলে কঠোপনিষদে বলা আছে:
"আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেবতু।
বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি   মনঃ প্রগ্ৰহমেবচ।।
                                       কঠোপনিষদ (১/১/৩)"
যার অর্থ হলো- দুই আত্মার মধ্যে জীবাত্মাকেই দেহরথের সারথী বলে জানবে। শরীর কে রথ বলে জানবে, বুদ্ধি কে দেহরথের চালক,এবং মনকে ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বগনের লাগাম বলে জানতে হবে।
অর্থাৎ এখানে এই দেহ হলো রথ এবং আত্মা হলো এই দেহরথের রথি,ঈশ্বর থাকেন আমাদের অন্তরে,রথযাত্রার রূপকের আড়ালে এটাই হলো প্রকৃত অর্থ।অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের অন্তরে বিরাজমান। 
এই বিষয় নিয়ে কৃষ্ণ যজুর্বেদিয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে তাঁর লৌকিক হস্ত নেই অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্ৰহন করেন। তাঁর পদ নেই অথচ তিনি সর্বত্র চলেন;তাঁর চোখ নেই অথচ তিনি সব দেখেন।কান নেই অথচ তিনি সব শোনেন; তাঁকে জানা কঠিন তিনি জগতের আদিপুরুষ। উপনিষদের এই প্রতীক রূপ হলো পুরীর জগন্নাথ দেবতা তাঁর নশ্বর রূপ তৈরীতে আমরা অক্ষম কিন্তু তবু আমরা আমাদের ভক্তিকে রুপ দি বিগ্রহে।সসআমাদের দেহের সাথে রথের অনেক মিল আছে। জগন্নাথ দেবের রথ ২০৬টি কাঠ দিয়ে তৈরী, তেমনি আমাদের দেহরথ টাও ২০৬টি হাড় দিয়ে তৈরী।উল্টো রথের পর জগন্নাথ দেব ঐ রথ থেকে বেরিয়ে গেলে আর ঐ রথে চাপেন না ।পরের বছরের জন্য আবার নতুন রথ তৈরী হয়।তেমনি আমাদের দেহ থেকে আত্মা বের হলে আর ঐ দেহে আত্মা প্রবেশ করে না। রথ টানে ছয়টি ঘোড়া,তেমনি আমাদের দেহ কে টেনে নিয়ে চলে ছয়টি ইন্দ্রিয়, পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও মন।রথের সাথে দড়ি দিয়ে ঘোড়া গুলি বাঁধা থাকে।অর্থাৎ রথরূপ দেহের রশি হলো আমাদের মন।
জগন্নাথ দেবের রথের রশির নাম হলো বাসুকি।এই রশি স্পর্শ করার জন্য ভক্তরা ব্যাকুল হয়ে থাকে। পুরান মতে, এই রশি স্পর্শ করলে পুনঃজন্মের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রথের সারথী হলো দারুক আর আমাদের দেহরথের সারথী হলো বুদ্ধি।

Journalist Name : SRIJITA MALLICK