অনুভূতির শোভাযাত্রা : রথযাত্রা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

  কিছু মাস আমাদের মনে চিরকালের মতো থেকে যায়; তেমনই একটি মাস হল আষাঢ়; এই মাসের আগমনের সাথে সাথে আমাদের মনে প্রথমেই যে কথাটা আসে তার হল 'রথ'। আর রথ মানেই পুরী, 'পুরীর জগন্নাথ, পুরীর রথযাত্রা'। এবছর পুরীর রথযাত্রা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার ৩০শে জুন। এই অনন্য উৎসবে তিন হিন্দু দেবতাকে তাদের মন্দির থেকে তাদের ভক্তদের সাথে দেখা করার জন্য একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়।
 এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয় পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যার পুরীতে, অন্যটি হয় পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে। এই উৎসবটি ভগবান জগন্নাথ, তাঁর বড় ভাই বলভদ্র এবং ছোট বোন সুভদ্রার বার্ষিক আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রাকে চিহ্নিত করে, তাদের বাড়ির মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে, যা তাদের মাসির বাড়ি বলে মনে করা হয়।
   এটি বিশ্বের একমাত্র উৎসব যেখানে ভক্তদের ভ্রমণের জন্য মন্দির থেকে দেবতাদের নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম রথ শোভাযাত্রা। লক্ষ লক্ষ লোক দেখতে আসে যখন একজন “রাজা” সোনার মপ দিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দেয় এবং ভাইবোন দেবতাদের বহনকারী তিনটি বিশাল ১৮-চাকার রথ বিশাল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে যায়। তাদের রথগুলি, যা ছোট স্থাপত্যের বিস্ময়কর,৪০০০-এরও বেশি কাঠের টুকরো থেকে ৪২ দিনেরও বেশি সময় ধরে তৈরি করা হয়। 
 অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতে রথযাত্রার দিনে সবসময় বৃষ্টি হয়। পুরীর এই রথযাত্রা একতা, ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির প্রতীক। প্রত্যেক বছর এই উৎসব ৯দিন ধরে চলে এবং এই রথযাত্রা দেখার জন্য অনেক দূর থেকে সকলে আসেন।
শুধু রথ দেখতে আসা বা রথের দড়ি ধরে টানার জন্যই যে সাধারণ জনগণ পুরীতে আসে তা নয়; অনেকে রথের মেলায় ঘুরতেও আসেন। সমুদ্রের ধারে রকমারি খাবারের দোকান, রকমারি জিনিসপত্রের দোকান সব দিকেই মন যায় সকলের। 
 রথের সাথে মেলার একটা আলাদা সম্পর্ক আছে। রথ টানা হবে অথচ মেলা না হলে সকলের মনে কোথাও না কোথাও একটা খামতি থেকে যায়। রথের মেলার সেই জিলিপি অন্য দিনের তুলনায় আলাদা একটা স্বাদ নিয়ে আসে। অন্যান্য মেলার থেকে রথের মেলার প্রতি মানুষের একটা বিশেষ টান থাকে, বিশেষত বাচ্চাদের। এই একটাই মেলা যেখানে ছোটো ছোটো কাঠের রথ, মাটির খেলনা ইত্যাদি পাওয়া যায় যা বাচ্চাদের ভীষণ প্রিয়। তাই রথের জন্য অনেক ছোটো সদস্য অপেক্ষা করে থাকে।
 রথের আমেজ কাটতে না কাটতেই আবার উল্টো রথের দিন গোনা শুরু হয়ে যায় সকলের। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে জগন্নাথ রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এবং আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দশমীতে এই রথগুলি ফিরে আসে।রথগুলি ফিরে আসার পর সেগুলি ভেঙে ফেলা হয় এবং এই কাঠগুলি জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।  এই উৎসবটি কেবলমাত্র একটি রথ শোভাযাত্রা নয়, বরং এই উৎসবের মাধ্যমে বাঙালিরা ‘দূর্গা মা' এর আগমনের অনুভূতি পায়। এই উৎসবের পরেই শুরু হয় মায়ের আগমনের কাউন্টডাউন।

Journalist Name : Suchorita Bhuniya

Tags:

উৎসব