হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলা, স্মৃতিমেদুর রথের মেলা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

আষাঢ় মাস, ঋতু হিসাবে দেখতে গেলে বর্ষাকাল, এই রকমই একটা সময়ে প্রতি বছরই রথ যাত্রা পালিত হয় মহা সমারোহে, ঠিক যেমনটা আগে হতো। এখন আর ওই ভিড়ের মধ্যে যেতে খুব একটা ভালো লাগে না, এমনিতেও আমি বরাবরই একটু ভিড় এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি, বললে বিশ্বাস করবেন না দুর্গা পূজোর জন্য জামা কিনতে যেতে চাই না ভিড়ের কারনেই, ও বাবা! বলতে বলতে তো মনে পরে গেলো পূজো তো আর বেশি দিন নেই, সোজা রথের দিনেই তো মায়ের কাঠামো পূজোও হয়ে গিয়েছে, একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। সে যাক গে, পূজোর আগে আমার এখন অনেক কাজ, সামনে আবার ইউনিভার্সিটি ফাইনাল। তবে এই রথ এলেই না মনটা কেমন ছোট বেলার দিকে উঁকি মারতে থাকে, কত স্মৃতিই না তাজা হয়ে আসে চোখের সামনে। রথের দিন দুপুরবেলা থেকেই শুরু করতাম উৎপাত, দোতলার জানলা দিয়ে দেখতাম কতগুলো অচেনা ছেলে মেয়ে ছোট ছোট রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমিও সেই দেখে বায়না করতাম ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কছে আমাকে গেট খুলে দাও আমিও যাবো ওদের সাথে, অগত্যা নাতির বায়নাতে নাজেহাল হয়ে তারাও গেট খুলে দিতেন। এ তো গেল দুপুরবেলার কথা, এবার রথের মেলায় যাবার গল্পটা করি, তখন বাবার সেই বুলেট গাড়িটা ছিল, আর আমি বসতাম তেলের ট্যাঙ্কের ওপরে, মানে যেমনটা বাচ্চারা বসে আরকি, আর মা বসতো পেছনে, দেখতাম রাস্তার দুই ধারে সারি সারি লোক দাঁড়িয়ে, রং-বেরঙের জামা কাপড় পরে, তাদের মধ্যে কেউ আবার পাঁপড় বিক্রি করছে, কেউ বিক্রি করছে কাঠি লাগানো ঝুমঝুমি বেলুন, আর মাঝে মধ্যে অবশ্য জিলাপি ভাঁজতেও দেখতে পেতাম, একটা কথা আমার মাথায় ঘোরে আচ্ছা রথ মানেই কি জিলাপি খেতে হবে? মানে, এটা কি কোন নিয়ম? না, নিয়ম না হলেও আমি খাবো,ভালোবাসায় আবার নিয়ম কি?। এখন ফিরে আসি গল্পে, পাঁপড়, জিলাপি, এই সবের মাঝখানে অবশ্য দেখতাম রথ নিয়ে আসছে একদল ছেলে, তবে বড় রথ কেন দেখতে পাচ্ছি না জানি না। বারবার বাবাকে জিজ্ঞেসা করছি, ও বাবা, বাবা বড় রথ কখন আসবে? বাবাও বলছে, আসবে বাবা এক্ষুনি আসবে, অবশেষে বড় রথ এলো, সামনে কত লোক, ঢাক ঢোল কতো কি বাজাচ্ছে, আর রথের মাথায় দিব্যি বসে আছেন তিন ভাই বোন। ওই ভিড় ঠেলেই বাবা আমার হাত ধরে নিয়ে যেত রথের দড়ি টানাতে, আমিও টানতাম বেশ মনের সুখেই, কিন্তু যা ভিড় বাপরে বাপ! রথের দড়ি টেনে টুনে তার পর যেতাম খেলনা কিনতে, রথের মেলা বসেছে আর কিছু কিনব না তা আবার হয় নাকি, এই সব করতে করতেই রাত হয়ে যেত, তারপর বাড়ি ফেরার পালা, সব রথ দেখে তারপর দাদু ঠাকুমার জন্য পাঁপড় আর জিলাপি কিনে তিন জনে ফিরে আসতাম বাড়ি। সত্যি, আজও সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, এখন ভিড় এড়িয়ে চললেও ওই দিন গুলোর কথা মনে পড়লে বেশ ভালোই লাগে কিন্তু। 

Journalist Name : Sabyasachi Chatterjee