একটি গ্রামীণ রথের মেলার চালচিত্র;কিছু স্মৃতি,কিছু আবেগ

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

কই গো তাড়াতাড়ি কর! বলে বাবা চেঁচিয়ে উঠলো, মা উত্তর দিল য একটু দাঁড়াও। বাবা দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির উঠানে একসঙ্গে রথের মেলা যাওয়া বাবার সঙ্গে আমিও দাঁড়িয়ে আছি এবং অপেক্ষা করছি মায়ের জন্য। মা ঠানদিকে প্রণাম করে বাইরে বেরিয়ে এসেই বাবাকে বলল- চলো। মা-বাবা আর আমি চলেছি রথের মেলায দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন মেলায় এসে উপস্থিত হলাম তখন আনন্দে আত্মহারা। বহু অপেক্ষার পর একসঙ্গে মেলা যাচ্ছি। সকাল থেকেই বায়না ধরেছি মেলাতে অনেক কিছু নেওয়ার যেমন আছে  মেশিনগান, খেলনা গাড়ি আরো অনেক কিছু। আমি শুনেছি বাবা মায়ের হাত ধরে বাবা আছেন ডানদিকে মা আছেন বাঁদিকে মধ্যখানে আমি চলেছি মেঠো রাস্তার মধ্য দিয়ে। পিছন ফিরে দেখলেই গাছপালায় ঢাকা আমার গ্রামটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেলা বসেছে বাবুঘাটে হাঁটা পথ তাই হেঁটেই যাচ্ছি। রাস্তায় যেতে যেতে সতীচরণের সঙ্গে দেখা। বাবা বলে উঠলো, কি হে সতীচরণ কোথা হতে আসছো? সতীচরণ বলল পরান কাকার বাড়ি গিয়েছিলাম ওনার খুব শরীর খারাপ তাই দেখতে। বাবা সতীচরণ কে জিজ্ঞাসা করল  পরাণ  কাকা কেমন আছেন? সতীচরণ বলল খুবই খারাপ, বিছানায় শুয়ে আছেন কিছু খেতে পারছেন না কবে তার একটা ব্যবস্থা হয় আর কি। সতীচরণ কাকা আমায় দেখে জিজ্ঞাসা করলো, কি ছোট ঠাকুর কোথায় চললে? মা উত্তর দিল মেলা দেখতে যাবে আমাদের সঙ্গে?  কাকা উত্তর দিলেন না মা ঠাকুরণ ;একা মানুষ কতদিক সামলানো যায় বলেন তো? সতী নাপিত প্রত্যেক রবিবার আসে চুল কাটতে আমাদের বাড়িতে। দূর থেকে শুনতে পাচ্ছি, মাইকের আওয়াজ হট্টগোল কোলাহল। তার সাথে সাথে আনন্দে আমার মনটা যেন নেচে উঠলো। সকাল থেকে অপেক্ষার পর বিকেল বেলায় যখন মেলাতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি তখন মনে হল যে আমার বন্ধুদের সঙ্গে একবার দেখা করে আসি। কারণ ওদেরকে বলেছি যে আজ আমি মেলা যাচ্ছি  এবং আমার বায়নার কথাও ওরা জানে। মেলা পৌঁছুতে দেখলাম মেলা ভর্তি লোক, সে ভিড়ে মিশে যাচ্ছি আমরা তিনজন। মেলায় বসে আছে বিভিন্ন ধরনের দোকান। বসেছি খেলনার দোকান জিলিপির দোকান নাগরদোলা ও আরো অনেক কিছু। নাগরদোলা দেখেই আমি লাফিয়ে উঠলাম আবদার করলাম সেটাতে ওঠবার। নাগরদোলার কাছে যেতেই সতীশ কাকা বলে উঠলো কি দাদা ভালো আছো তো , বৌদি ভালো আছো? বাবু কেমন আছিস? কিছুক্ষণ আলাপের পর আমরা তিনজনে উঠলাম নাগরদেলায়। নাগরদোলায় দোল খেতে খেতে মনে পড়ছিল ঠানদিকে আর আছি তো আমাদের সঙ্গে তার উপায় নেই। থান্দি আসতে চাইলো না বলল তোরা যা আমার বয়স হয়েছে। বরাবরই এরকমই। বাবা আমার সব বাইনা  পূরণ করল একের পর এক। বাড়ি থেকে আসার সময় ঠান্ডি আবদার করেছিল একটা হাতপাখা আনতে সেটাও বাবা নিল। মা মেলাতে সংসারে র জিনিসপত্র কিনে দুই হাত ভর্তি করে ফেলেছে। ঘোরাঘুরি,খাওয়াদাওয়া আনন্দেই আমি সম্পূর্ণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই ক্লান্ত আমি কে নিয়ে বাবা কাঁধে পিঠে করে  নিয়েছে। আমরা বাড়ি ফিরছি তখন রাত্রি এগারোটা বাজে। বাড়ি ফিরছি আমরা তিনজন এই ঘুটঘুটে রাত্রি  অন্ধকারে দূর থেকে ভেসে আসছে মেলার হট্টগোল আর পিছনের ফেলে আসছি সেই মানুষ হয়ে ভিড় হট্টগোল আওয়াজ দোকান নাগরদোলা প্রভৃতিদের।  

Journalist Name : অর্জুন দাস