স্মৃতিচারণে রথের মেলা

banner

#Pravati Sangbad Digital Desk:

কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ; তবুও যেন বাঙালির মন ভরে না। সময় নদীর স্রোতের ন্যায় বয়ে চলেছে; ঠিক সেই রকমই বৈশাখ মাসের নববর্ষ পালনের রেশ মিটতে না মিটতেই বাঙালি আবার মেতে ওঠেন উৎসবের মরশুমে।তারই মধ্যে এমন উৎসবও রয়েছে,যা শুধু উৎসবই না,মানুষের মিলনক্ষেত্র তথা মেলা আর বাংলা বছরের মেলা শুরু মানেই তো রথের মেলা।
 শাস্ত্রমতে,একটি অন্যতম ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক উৎসব হল রথযাত্রা। সাধারণতঃ জুন-জুলাই মাসেই এই রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায়।আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের তিথিতেই আসে সোজা রথ। এবং নবম দিনে অর্থাৎ, শুক্লা পক্ষের একাদশীতে উল্টোরথ।
 রথযাত্রা মানেই মনে পড়ে যায় সেই ছোটবেলার কথা।ছোটবেলায় আমাদের সবার কাছেই রথযাত্রা মানেই একটা বিশাল আয়োজন।রথযাত্রা শুরুর মোটামুটি দিন ছয়েক আগে থেকেই নিজেদের ছোট্ট রথ বানানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।তারপর দিন গুনতে গুনতেই যেন দোরগোড়ায় এসে হাজির সোজা রথ অর্থাৎ, রথের প্রথমদিন।এদিকে রথও তৈরি।রথে স্বয়ং জগন্নাথ,সুভদ্রা ও বলরাম ফুলের সাজ পরে যেন এক আলাদা মাত্রা পেয়ে যান।সকাল থেকেই রথের দড়িতে টান দেওয়ার জন্য উন্মাদনার শেষ ছিল না বিকেল গড়ার সাথে সাথে গড়াত রথের চাকাও। এবং সেই সাথে তালে তাল মিলিয়ে ছুটতো আমাদের শৈশব জগন্নাথ দেব কে মাসির বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মন চলে যেত মেলা প্রাঙ্গণে। 
রথের মেলা মানেই পাপড় থেকে শুরু করে জিলিপি,'হরেক মাল দশ টাকা', রান্নাবাটি, নানারকম চাবির রিং ,এগুলো ছাড়া রথের মেলা ভাবা বেশ মুশকিল। আর এই জিনিসগুলোই বাঙালিদের নস্টালজিক করে তোলে আজও। 
বাড়িতে নানান রকম পাঁপড় ভাজা খেলেও,রথযাত্রার সময়ে ধুলোর প্রলেপ লাগা পাঁপড় ভাজা ছাড়া যেন ঠিক জমে না রথের মেলা। 
এদিকে রথের মেলা মানে সকাল থেকে স্টলে ভাজতে থাকা জিলিপি নিয়ে বাড়িতে ঢোকা।একথা মানতেই হয় মেলার জিলিপি যেন বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে জুড়ি মেলাভার। 
রথের মেলায় দোকানে গিয়ে রান্নাবাটি থেকে পুতুল,এগুলো বাদ দিই কীভাবে?কিংবা সেই প্লাস্টিকের খেলনা গাড়ির জন্য বাচ্চাদের যে বায়না! খেলনার দোকানের সামনে বাচ্চাদের ভিড় এদিন এক অন্যতম সেরা মুহুর্তকে তুলে ধরে।
তবে যুগের তালে তাল মিলিয়ে একটু হলেও যেন বদলে গিয়েছে সেই আনন্দ উপভোগের মুহূর্তগুলো।কারণ বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক বেশি সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর।ব্যস্ততার মাঝেও মেলায় গেলেও সেই ছোটবেলার মুহূর্তগুলো হয়তো আর সেভাবে উপভোগ করতে পারিনা। কতক্ষণে চার -পাঁচটা ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবে সেটাই যেন মূল লক্ষ্য।

Journalist Name : Riya Some